আমার সবকিছুতেই মিশে আছেন বাবা
বাবা এক অনুভূতির নাম। মনের কল্পনার ছবিতে নায়ক হিসেবে যার ছবি প্রথমেই ভেসে ওঠে সেই তো বাবা। সারা মাস মর্নিং, ইভেনিং বা নাইট ডিউটি করে বেতনের টাকা পেয়ে, নিজের হাত খরচের জন্য মাত্র দুই বা তিন হাজার টাকা রেখে বাকি টাকা যিনি সন্তানের উজ্জল ভবিষ্যতের জন্য খরচ করেন, সেইতো বাবা। যা পৃথিবীতে আপনার জন্য আপনার বাবা ছাড়া আর কেউ করবে না।
ঈদে নিজের জন্য কোনো কাপড় না কিনে যখন আমার পোশাক ঠিকই কিনে আনেন। এরপর আমার যদি সেই ড্রেস পছন্দ না হয়, সেজন্য যদি আমি রাগ করে না খাই, তখন আবার শপিংয়ে নিয়ে গিয়ে আমার পছন্দমতো পোশাক কিনে দেয়া, এতটা অবুঝ আচরণ সহ্য করা একমাত্র বাবার পক্ষেই সম্ভব। আর এখন তো কত ঈদ যায় কেউতো কখনো খোঁজই নেয় না যে ঈদে নতুন পাঞ্জাবি কিনেছি কি না।
বিজ্ঞাপন
বাংলা সাবজেক্টসহ পাঁচ সাবজেক্ট প্রাইভেট পড়তে হবে, টাকা কোথা থেকে আসবে সেটাতো আব্বুই বুঝবে। ল্যাপটপ লাগবে সেটা বলা পর্যন্ত আমার কাজ আর টাকা কীভাবে ম্যানেজ হবে সেটা তো বাবাই জানেন। সন্তানের এতসব আবদার বাবা ছাড়া কেউ শুনবেনই না আর পূরণ করাতো দূরের কথা।
যিনি হাত ধরে হাটতে শেখান, জুতার ফিতা কীভাবে বাঁধতে হয়, প্যান্ট পরে কীভাবে শার্ট ইন করে পরতে হয় সব তো বাবার কাছ থেকেই শেখা। বৃষ্টির দিনে যিনি বিদ্যালয় থেকে এগিয়ে আনতে যান, একটু অসুস্থ হলে যিনি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান, অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে যিনি হাতে করে অন্তত একটি চকোলেট নিয়ে আসেন, যার উপস্থিতি দুনিয়ার কঠিন বাস্তবতা বুঝতে দেয় না, একেবারে দুশ্চিন্তামুক্ত নিরাপদ আশ্রয়ে যার কাছে থাকা যায় সেইতো বাবা।
একসঙ্গে নামাজ পড়তে যাওয়া, নামাজ শেষ করে তরমুজ কিনে বাসায় ফেরা, বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদীর পারে ঘুরতে যাওয়া, নদীর পারে বসে বাদাম খাওয়া- কতশত স্মৃতি বাবার সঙ্গে। রাতে কোনো ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে চিৎকার করে উঠলে যিনি সবার আগে দৌড়ে আসেন, তিনি বাবা। দাঁড়িয়ে পানি খেতে গেলেই মনে পড়ে তার বলা কথা- ‘বসে পানি খেতে হয়’। আজও নামাজ পড়তে যাই, সেই জায়গাটা দেখতে পাই শুধু সেখানে বাবা থাকে না। বৃষ্টির রাতে আম কুড়াতে যেতাম তার সঙ্গে। এখন সেই আম গাছের নিচেই শুয়ে আছেন আমার বাবা। আমার সব স্মৃতিতেই বাবা।
সারাদিনে কেউ যখন খোঁজ নেয়ার থাকে না, তখন বাবাকে খুব মনে পড়ে। বাবা বেঁচে থাকলে অন্তত একবার ফোন দিয়ে বলতেন- ‘বাজি কেমন আছো?’। নির্দ্বিধায় যাকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা যায়, তিনি ছিলেন আমার বাবা। মৃত্যুর আগেও তিনি নিজের কথা না ভেবে আমার কথা ভাবতেন। তার মনে হতো, তার মতো বয়স্ক ও অসুস্থ পিতা থাকলে সেটা তার ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে বাধা হতে পারে, মায়ের পরে এমন নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে পারেন একমাত্র বাবা।
বাবা, আপনাকে কখনো বলা হয়নি যে অনেক ভালোবাসি, তবুও শুধু আপনার কাছ থেকেই অকৃত্রিম ভালোবাসা পেয়েছি। আপনি থাকতে হয়তো কখনো তা অনুভবই করতে পারিনি। কিন্তু পৃথিবীর চরম বাস্তবতার মাঝে এখন তা বুঝতে পারি যে, বাবা তো বাবাই হয়। আপনার কাছ থেকেই আমার কেয়ারিং এবং ভালোবাসা বুঝতে শেখা। পরপারে ভালো থাকুন বাবা।