আমার পৃথিবী মানে আমার মা
আমার মা আমার কাছে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার। বাবা মারা যাওয়ার ২০ বছর হয়ে গেল কিন্তু আমার মা আমাকে বাবার অভাব কখনো বুঝতে দেননি। সবাই যেখানে বাবার হাত ধরে স্কুল-কলেজে যায়, সেখানে আমি আমার মায়ের হাত ধরে এতটুকু পথ পাড়ি দিয়ে এসেছি। উঁচুনিচু পথ পাড়ি দিতে আমার এতটুকুও কষ্ট হয়নি। কারণ বাবার মতো ছায়া আমি আমার মায়ের কাছ থেকে পেয়েছি।
প্রতিদিন খুব ভোরে আমি কলেজে যাই। মানুষজন রাস্তা ঘাটে থাকে না বলে আমার মা আমাকে খানিক পথ এগিয়ে দিয়ে আসেন। সেদিন তার কষ্ট হবে ভেবে আমি একাই চলে যাই। তাকে মিথ্যা বলি যে অন্য একজন মেয়ের সঙ্গে যাবো। কিন্তু খানিক পথ যাওয়ার পর পিছন ফিরে যখন মাকে দেখতে পাইনি তখন ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠেছিলো। কিছু একটা শূন্যতায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিলো মাকে কেন দেখতে পাচ্ছি না, আমার কথা না শুনে কেন তিনি পেছন পেছন আসলেন না, কেন পিছন থেকে ডেকে বললেন না- ‘কলেজে গিয়ে কিছু একটা খেয়ে নিস, কলেজে পৌঁছে সঙ্গে সঙ্গে কল দিস’।
বিজ্ঞাপন
সবার মায়ের মতো আমার মায়েরও কিছু ইচ্ছা-অনিচ্ছা আছে। কিন্তু আমি যখন চেয়ে দেখি মায়ের শখের কোনোকিছু আমি এনে দিতে পারছি না তখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি যদি আমার মাকে ভালো রাখতে না-ই পারি, তাহলে কেন আল্লাহ আমাকে পৃথিবীতে পাঠালেন। মানুষের অনেক স্বপ্ন থাকে। কিন্তু জানো মা, তোমাকে ভালো রাখা ছাড়া তোমার এই মেয়ের আর কোনো স্বপ্ন নেই।
আমি কখনো জান্নাত দেখিনি। কিন্তু আমার মায়ের শরীরের ঘ্রাণ থেকে আমি জান্নাতি সুবাস অনুভব করি। আমার মায়ের বুকে মাথা রেখে আমি জান্নাতি সুখ অনুভব করি। এই দুনিয়ার ভাঙা গড়ার নিয়মে আমারও মন ভাঙে। কিন্তু আমি কখনো কাউকে দেখাতে যাই না হৃদয়ের ক্ষত কতটুকু গাঢ়। তবে আমি চুপচাপ ছুটে যাই আমার মায়ের কাছে। মায়ের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকি। জানি না কীভাবে আমার নিজেকে তখন অনেক সুখী মানুষ মনে হয়। ভেতর থেকে বেরিয়ে আসা দীর্ঘশ্বাস ম্লান হয়ে যায়।
আমার জ্বর হলে যখন তিনি ছটফট করেন, আমার কাছে চলে আসেন, আমি দেখে হাসি। মাঝে মাঝে রেগেও যাই। কারণ সামান্য বিষয় নিয়ে উনি যা তুলকালাম করেন, মনে হয় অনেক বড় কিছু হয়ে গেছে। উনি তখন একটা কথাই বলেন, ‘মা হলে বুঝবে সন্তানের জন্য মায়ের মনে কতটুকু সংশয় থাকে’।
আমার মাকে আমি কখনো বলতে পারিনি কতটুকু ভালোবাসি। কারণ এটা বলার মতো ভাষা কিংবা শব্দের পরিধি আমার জানা নেই। তবে মাঝে মাঝে চুপচাপ তার মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি। তিনিও আলতো হেসে বুকে টেনে নেন। হয়তো বুঝে যান তার প্রতি আমার ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার কথা। বাড়ি ফিরে যখন তাকে খুঁজি, তার মুখটা দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকি, তিনি হয়তো তখন বুঝে যান আমার পৃথিবী মানেই আমার মা।