আমার মা সুপার ওম্যান
আমার মাকে আমি বলি সুপার ওম্যান। এমন কোন কিছু নেই যে তিনি জানেন না। সকালে সূর্য ওঠার পর থেকে ক্লান্তিহীনভাবে রাত এগারোটা পর্যন্ত তিনি সংসারের জন্য খেটে যাচ্ছেন। কখনো ওনাকে ক্লান্ত হতে দেখিনি। কি রমজান, কি ঈদ, কি গ্রীষ্ম অথবা শীত, বর্ষা সব সময় দেখেছি ওনাকে কিছু না কিছু করতে। উনি অসুস্থ এজন্য আমার জীবনে একবেলার জন্যও আমাদের চুলায় রান্না বন্ধ রয়েছে এরকম দিন আসেনি।
আমার মা কোনদিন আমার ওপর বা আমাদের সংসারের ওপর বিরক্ত হননি। কোন কিছু পাওয়া বা প্রতিদানের আশায় উনি ওনার সারাটা জীবন এই সংসারের জন্য ব্যয় করেছেন বলে আমার মনে হয়নি। জীবনে অনেক অনেক অপ্রাপ্তি আছে, অভাব আছে, অভিযোগ আছে কিন্তু কখনো এসব নিয়ে ওনাকে কষ্ট পেতে দেখিনি। যা কিনে দিয়েছি আমি অথবা আব্বু তাই ব্যবহার করেছেন। যখন যা রান্না খেতে চেয়েছি তাই রান্না করেছেন কোনদিন একবারের জন্যও বিলাসিতা করতে দেখিনি।
বিজ্ঞাপন
আমার মাকে আমি বলি স্মার্ট ওম্যান। এই বয়সেও উনি দারুণভাবে সবকিছু হ্যান্ডেল করতে পারেন। উনি খুব দারুণ লিডার। নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সবকিছু নিজের মতো করে করতে পছন্দ করেন। আগে সবকিছু না পারলেও এখন দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়ে, আমাদের সব ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়ে, আমাকে শহরে রেখে উনি দুনিয়ার সবকিছুতে এক্সপার্ট হয়ে গেছেন। উনি সব খবরাখবর রাখেন, এখনও সব ধরনের রান্না করেন। আমি অবাক হই এই বয়সে নিজের সারাদিনের কাজ করেও দেশের সমস্ত খবর তিনি রাখেন। মা ক্রিকেট খেলা দেখেন, নাতনিদের সঙ্গে কার্টুনও দেখেন আবার সিরিয়ালও দেখেন।
আমার মা ছোটবেলা থেকে আমাদের শাসক। আমরা তিন ভাইবোন আব্বুকে মোটেই ভয় পাই না কিন্তু ছোটবেলা থেকে আম্মুকে বাঘের মতো ভয় পাই। আমার মা ক্ষিপ্ত বাঘের মতো ভয় দেখিয়ে আমাদের শাসন করেছেন বলেই হয়তো আজকে আমরা তিন ভাইবোনই মানুষ হয়েছি। আমার মা ফুটন্ত পদ্মের মত ঝকঝকে সুন্দর, পবিত্র। তিনি মুরগির বাচ্চার মতো আমাদের আগলে রেখে বড় করেছেন। আমার মা চির সবুজ, মাঝেমধ্যে শিশুর মতো। হাপুস নয়নে কাঁদে, উচ্চস্বরে হাসে, খুব রাগও করে।
আমার মাকে এখন আমরা আর ভয় পাই না। আমরা এখন বড় হয়ে গেছি। এখন নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমার মা এখনো আমাদের শাসন করার চেষ্টা করে। কিন্তু আমরা মাকে থামিয়ে দেই। মা চুপ হয়ে যায়। কিছু একটা ভাবে, কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারে না। আবার নিজের কাজে মন দেয়। আবার আমাদের খাওয়ার জন্য ডাক দেয়। আমরা খুশি মনে আম্মুর হাতের রান্না খাই।
আমরা তিন ভাইবোনই আম্মুকে প্রচণ্ড ভালোবাসি। কিন্তু সেটা বোধহয় তার অবদানের তুলনায় অনেক কম। মা এমনই হয়, কোনদিন কিছু পাওয়ার আশা করেন না। তাকে আমি এখনো কিছুই দিতে পারিনি। কিন্তু এখনো তিনি আমাকে দিয়েই যাচ্ছেন, দিয়েই যাচ্ছেন।। জানি এই দিয়ে যাওয়াটা তার চোখ বন্ধ হওয়া ছাড়া থামবে না। পৃথিবীর কোনো মা’ই থামে না। এজন্যই কিছু বলি না, প্রতিদানও দিতে চাই না। শুধু মাঝেমধ্যে থামিয়ে দেই। এত বেশি ভালোবাসার দরকার কী, এখন বড় হয়ে গেছি একটু কম ভালোবাসলেও তো পারে!