সোশ্যাল মিডিয়া বেশি ব্যবহার করলে দাঁতে ব্যথা হয়!
যেসব মানুষ বেশিরভাগ সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান তারা অনিদ্রা ও দাঁতে ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন। সম্প্রতি ইসরায়েলের তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে আসে। গবেষণাটির জন্য দুই ধরনের মানুষের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। এর মধ্যে একদল স্মার্টফোন ব্যবহার করেন এবং আরেক দল কোশার ফোন ব্যবহার করেন। ইসরায়েলের ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত হয় কোশার ফোন। এর মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তারা।
তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী ২৪ শতাংশ ব্যক্তি দিনের বেলায় স্মার্টফোন এবং ৬ শতাংশ কোশার ফোন ব্যবহারকারী দাঁতের ব্যথায় আক্রান্ত হন। তারা জানায়, ২৯ শতাংশ নিয়মিত স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ও ১৪ শতাংশ কোশার ফোন ব্যবহারকারী চোয়ালে ব্যথা অনুভব করেন।
বিজ্ঞাপন
গবেষণায় আরও বলা হয়, ২০ শতাংশ স্মার্টফোন ও কোশার ফোন ব্যবহারকারী অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন। তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল স্কুলের বিজ্ঞানী ডক্টর পেসিয়া ফ্রাইডম্যান রুবিন টাইমস অব ইসরায়েলকে বলেন, ‘স্মার্টফোন ও কোশার ফোন ব্যবহারের মাধ্যমে দাঁতে ব্যথা ও অনিদ্রার সমস্যা তৈরি করছে। মানুষ বারবার স্মার্টফোন খুলছে এবং হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও অন্যান্য অ্যাপ বের করছে। এর মূল কারণ তারা এসব বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই দুই দলের মধ্যে আমরা কোনো পার্থক্য খুঁজে পাইনি। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের মাধ্যমে চোয়াল ও দাঁতে ব্যথা এবং অনিদ্রার সমস্যা হতে পারে।’
ডক্টর রুবিন মনে করেন, তাদের এই গবেষণার মধ্য দিয়ে মানুষ প্রযুক্তি সম্পর্কে আরও সচেতন হবে এবং বুঝতে পারবে যে প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। তিনি বলেন, ‘প্রযুক্তির অগ্রগতিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। কিন্তু দৈনন্দিন জীবনে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।’ রুবিন আরও বলেন, ‘প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষ যাতে সচেতনতা অবলম্বন করে সেটিই গবেষণার মৌলিক বিষয়।’
দাঁতের ব্যথা সংক্রান্ত গবেষণাটি পিয়ার রিভিউ জার্নাল কুইনটেসেন্স ইন্টারন্যাশনালে প্রকাশিত হয়েছে। যাদের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়েছে তারা সবাই শিক্ষার্থী এবং তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী নয় এমন বিষয়ে গবেষণা এর আগে বহুবার হয়েছে। ২০১৯ সালে ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের ৬০০০ শিশুর ওপর গবেষণা করে দেখা যায়, অতিরিক্ত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের কারণে বিষণ্নতা, একাকিত্ববোধ ও খিটখিটে মনোভাব তৈরি হয়।
২০১৭ সালে এক গবেষণায় বলা হয়, বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকের কারণে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। এ গবেষণার পর সোশ্যাল মিডিয়াটি এক ব্লগপোস্টে জানায়, ‘ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তথ্য গ্রহণ’ করলে মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে না।
গত বছর ল্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষণায় অ্যান্ড্রইড ও আইফোন ব্যবহারকারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। গবেষণাটির মূল লেখক এবং ল্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হিদার শাও বলেন, ‘একজন মানুষ যদি প্রতিদিন স্মার্টফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে সে দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা বা অবসাদগ্রস্ততায় ভুগতে পারেন।’
দ্য টেলিগ্রাফ অবলম্বনে এইচএকে/এইচএন/এএ