মায়ের কাছে চিঠি
প্রিয় আম্মু,
নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে সবসময় তালগোল পাকিয়ে ফেলি আমি। তবুও আজ হঠাৎ কি এক অদৃশ্য আকষর্ণে তোমাকে খোলাচিঠি লিখতে বসলাম। জানি তুমি অনেক ব্যস্ত। সারাদিন সবাইকে ভালো রাখতে ব্যস্ত। তবুও তোমার ব্যস্ত সময় থেকে অল্প কয়েক মিনিট নিয়ে তোমাকে লিখছি।
বিজ্ঞাপন
হয়তো অবাক হয়ে ভাবছো এসব চিঠিপত্র হঠাৎ কেন! তবে বলছি শোনো। তুমি তো ঘরদোর গুছিয়ে, তোমার স্বামী-সন্তানদের রেঁধে খাইয়ে নিখুঁতভাবে, সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে আগলে রাখছো সংসারটাকে। প্রতিদিন এসব জাদুর মতো করে তুমিই করে যাচ্ছো। কিন্তু সংসারটাকে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখার এই নিখুঁত ছবিতে তুমি তো কোথায় আম্মু? তোমাকে তো কোথাও দেখা যায় না, শান্তি-স্বস্তিতে বিশ্রাম নিতে। তবে তো এই সুন্দর, জাদুরমতো সংসারের ছবিটা অসম্পূর্ণ।
তুমি পুরো পরিবারকে ভালোবাসতে, ভালো রাখতে এতোই ব্যস্ত যে নিজের প্রতি সামান্য একটু ভালোবাসা বাঁচিয়ে রাখা, নিজেকে একটু ভালো রাখার চেষ্টা করার শক্তি তোমার মধ্যে আর অবশিষ্ট থাকে না। অথচ আমাদের ভালো থাকার প্রয়োজনেই তোমার ভালো থাকাটা ভীষণ জরুরি। কিন্তু সবাইকে ভালো রাখার চিন্তা তোমার নিজেকে নিয়ে ভাবার ফুরসত ভুলিয়ে দেয় সবসময়।
সবকিছু নিখুঁতভাবে করতে গিয়ে তোমার নিজের শরীরের কি অবস্থা করেছো সে খেয়ালও নেই তোমার। অবশ্য নিজেকে নিয়ে ভাবার, নিজের প্রতি খেয়াল রাখার সময়ও তো নেই তোমার। আম্মু! তুমি তো সারা জীবন চেষ্টা তো করে গেলে ‘নিঁখুত’ শব্দটাতে ভর করে সংসারের সব কাজ করতে। তবুও কি পেরেছো সব কিছুকে খুঁতহীন করতে? আসলে বলতে গেলে নিখুঁত বলে তো কিছু হয় না। তাই সবকিছুতে একটু খুঁতই না হয় থেকে যাক। তুমি এবার অতো শতো দুশ্চিন্তা ঝেড়ে নিজেকে, নিজের শারীর, মন, মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি একটু যত্ন নাও।
মাঝেমধ্যে না হয় ঘরটা একটু এলোমেলোই পড়ে থাক। হঠাৎ কখনো রান্নাটা একটু খারাপ হলেই বা কি হবে? সবাই না হয় ম্যানেজ করে নেবে একটু। তবুও তুমি একটু বিশ্রাম করো। তোমার শখের কোনো কাজ করো, যেটা হয়তো করতে অনেক বছর আগে।
ক্লান্ত শরীরটাকে ছুটি দাও একটু। সব দুশ্চিন্তা ঝেড়ে একটু শান্তিতে ঘুমিয়ে নাও। কতো বছর একটা শান্তির ঘুম হয়নি তোমার বলো তো? আম্মু! আমি চাই, আজ থেকে তোমার পৃথিবীটা যেন শুধু আমাদেরকে কেন্দ্র করেই না ঘোরে, এটা যেন এখন থেকে তোমার নিজেকে কেন্দ্র করেও ঘোরে।
আমার মতো অনেকই হয়ত মায়েদের কাছে খুব করে একই কথা বলতে চায়, কিন্তু সুযোগ হয়ে উঠে না। আজ নাহয় সবার হয়ে আমিই বলে দিলাম। এই দূর পরবাসে তোমাকে অনেক বেশি মনে পড়ে। তোমাকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসি আম্মু।