মা আমার আলোকবর্তিকা
কিছু মানুষ নক্ষত্রের মতো হন, যারা তাদের চারদিক আলোকিত করে রাখেন সবসময়। আমার মতে প্রত্যেক মা হলেন লুব্ধক, যাদের আলোকছটায় আমরা আলোকিত এবং আবর্তিত হই। প্রতিটি মানুষের মতো, আমারও সবচেয়ে প্রিয় মানুষ আমার ‘মা’, যাকে ছাড়া আমি আমাকে কখনও কল্পনা করতে পারি না।
আদর, শাসন, ভালোবাসার আধার হিসেবে আমার জীবনকে পরিপূর্ণ করেছেন যেই মহীয়সী, তিনিই আমার মা। পৃথিবীর সব মায়ের মতো আমার যোদ্ধা মা ও আমার জন্য সব করতে পারেন। আমার প্রতিটি সুখি মুহুর্তে মা যতটা পাশে থাকেন, জীবনের জীর্ণতা, ব্যর্থতা এবং মলিনতায়ও মা আমার পিঠ চাপড়ে সামনে চলার শক্তি জোগান।
বিজ্ঞাপন
পৃথিবীর সব মায়ের মতো আমার মা ও আমার আলোকবর্তিকা। মা আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক এবং নিরাপদ আশ্রয়। তবে সবার আগে আমার মা আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, যার সঙ্গে নিঃসংকোচে সব কথা বলা যায়। বাবা চলে যাওয়ার পর আমার সাহসী ও সংগ্রামী মা ই আমার বাবা এবং মায়ের ভূমিকা পালন করেছেন পরম সাফল্যের সঙ্গে।
আমিও বাধ্য মেয়ের মতো মায়ের লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকার চেষ্টা করেছি সবসময়। কিন্তু মা কে আমি নতুন করে আবিষ্কার করি, নিজে মা হওয়ার পর। প্রেগন্যান্সির কষ্টের মুহুর্তগুলোতে সবার আগে মায়ের কথা মনে পড়তো, উপলব্ধি করতাম মা কতটা কষ্ট করেছেন আমার জন্য! তারপর আমার কোলজুড়ানো মেয়ে এলো,আমার মধ্যে এলো মাতৃত্ব।এতটুকুন মেয়ের ছোট ছোট হাত পা, মায়ামাখা হাসিমুখ আমায় শ্রেষ্ঠ সুখানুভূতির যোগান দেয়। আবার মেয়ের জন্য ক’দিনের রাতজাগা ক্লান্ত চোখে আমি মায়ের মুখ দেখি এবং উপলব্ধি করি, আমাকে বড় করতে গিয়ে মা কতশত রাত জেগেছেন! আমার অসুস্থতায় মা কত রাত জেগে পার করেছেন! কত ত্যাগ স্বীকার করেছেন!
মা হওয়ার প্রতি পদক্ষেপে আমি উপলব্ধি করি, মা হওয়া এত সহজ নয়। অসহনীয় যন্ত্রণা সহ্য করে যে মা সন্তান জন্ম দেন, সেই মা সন্তান বড় করতে গিয়ে জীবনের অনেকটা সময় পাড়ি দেন অনাড়ম্বরে। মায়েদের শখ, ইচ্ছে, অবসর যাপন সবকিছু আবর্তিত হয় সন্তানকে ঘিরে।
সন্তানের আবদার পূরণ করতে গিয়ে মায়েদের চাওয়া চাপা পড়ে যায় প্রতিনিয়ত। কিন্তু মায়েরা কখনও অভিযোগ করেন না। মুখ ফুটে কখনও অনুযোগ করেন না। মায়েরা কেবল স্বপ্ন দেখেন,তাদের সাত রাজার ধন একদিন বড় হয়ে মায়ের সব কষ্ট ঘুচাবে। অথচ আমরা সেই সন্তানেরা বড় হয়ে নিজেদের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যাই। এতদিনে বুড়িয়ে যাওয়া মায়ের স্বপ্নগুলো পূরণ করা দূরে থাক, কাজের চাপে মাকে সময় দেওয়ার ফুসরত মেলে না। অথচ জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে একমাত্র মায়ের সান্নিধ্যেই সবচেয়ে শান্তি মেলে। মা হওয়ার পর আমার মাকে আমি নতুন করে বুঝতে শিখি। অবাক হয়ে লক্ষ্য করি, মা এখনও আমাদের ভালো রাখতে গিয়ে নিজের ইচ্ছা, ভালোলাগা বিসর্জন দিয়ে যাচ্ছেন হাসিমুখে।
মায়ের যেন কোনও ক্লান্তি নেই,বিষাদ যেন মাকে স্পর্শ করেনা। একজন মা হিসেবে আমি জানি,মায়ের ঋণ শোধ করা অসাধ্য। কিন্তু আমি আমার সবকিছুর বিনিময়ে হলেও মায়ের তৃপ্ত হাসিমুখ দেখতে চাই সদা সর্বদা। আমাদের মায়েরা ভালো থাকুক সবসময়। মলিনতা মায়েদের স্পর্শ না করুক। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা।