তোমার স্পর্শ খুঁজে ফিরি
আমার শৈশবের স্মৃতির আঙিনায় দোল খাচ্ছে মা, আমি বসে আছি তার কোলজুড়ে। প্রত্যেক শিশুর পৃথিবীই হচ্ছে তার মা। সন্তানের সামান্য আঘাতে ব্যথিত হন মা। মাকে আল্লাহ সন্তানের রক্ষাকবজ করে বানিয়েছেন। সেই শৈশবের স্মৃতিতে চৈত্রের রোদে অবুঝ বালকের দুরন্তপনায় মা ছিল আমার মাথার ওপর ছাতা। সেইসব দুপুরের স্মৃতিতে মা সন্তানের ঘুমের জন্য কত বাহানা, কত রূপকথার গল্প শুনিয়েছেন। মায়ের সেসব গল্পে ঘুরেফিরে অসংখ্য রূপকথার রাজপুত্র আসতো। মধ্যবিত্তের সংসারে আমার অভাব পূরণ করতে তার যে কত যে ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করতে হয়েছে তা বলে শেষ করা যাবে না। সেইসব সকাল, দুপুর, রাত; শৈশবের প্রতিটি মুহূর্তে আমার মায়ের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
শহুরে ছাত্র জীবনে সবচেয়ে বেশি অভাববোধ করি মায়ের। মায়ের সঙ্গে যোগাযোগের উপায় মুঠোফোন। হঠাৎ হঠাৎ কল করে মা নানা প্রশ্ন করে। শরীর কেমন আছে? ভাত কী দিয়ে খেয়েছো? পড়ালেখা কেমন চলছে? বাড়ি আসবে কবে? কখনো কখনো এতগুলো প্রশ্ন একসাথে শুনে আমি বিব্রতবোধ করি। আংশিক উত্তর দেই। তবু সে বুঝে ফেলে আমার অব্যক্ত কথা। শহরে পথ চলতে যখন কোনো মা-ছেলেকে একসঙ্গে দেখি, আমার ভেতর মায়ের অনুপস্থিতি ব্যথা হয়ে ফোটে, খুব মন খারাপ হয়।
বিজ্ঞাপন
যখন খুব ক্লান্ত হয়ে ঘুমের দেশে পাড়ি দেই তখন স্বপ্নে দেখি মা জুতোহীন কোমল পায়ে উঠোনে হেঁটে বেড়াচ্ছে, পেছনে ঝুলছে তার ভেজা আঁচল। আমি তখন কপালে আর কপোলে মমতাময়ীর কোমল হাতের তৃষ্ণা বোধ করি। কাছে থাকলে সে আমার কপালে ঠিকই হাত রাখতো। জিজ্ঞেস করতো, শরীর খারাপ করেনি তো? বাড়িতে মায়ের এসব প্রশ্ন অবান্তর মনে করতাম। এখন তাকে ছেড়ে দূরে আসাতে এসব প্রশ্নের অর্থ বুঝতে পারি।
সহজেই এমন মূল্যবাণ ভালোবাসা পাওয়ার পরও মায়ের সঙ্গে বুঝে, না বুঝে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি। এসব কথা মনে হলে নিজেকে মহা অপরাধী মনে হয়। ক্ষমা চাওয়ার জন্য তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চাওয়া হয় না। তিনি নিজে থেকে সব কিছু ক্ষমা করে দেন। তার এ এক মহৎ গুণ। জীবনে যেন তার সঙ্গে আর কখনো এমন ব্যবহার না করি, মা দিবসে এটাই আমার প্রত্যাশা। সে আমার জীবনে আলো দিয়ে যাচ্ছে। তার জন্য আমার সুন্দর জীবন। তার জন্য আমার সব স্বপ্ন আলোকমুখী। তার কোমল মুখ আমার সব দুঃখ ভুলিয়ে দেয়, তার স্নিগ্ধ কণ্ঠ আমাকে অপার শান্তি দেয়। হে আরশের মালিক, তুমি আমার মাকে দীর্ঘজীবী করো।