তোমাকে ছাড়াই বেঁচে আছি মা
মা, আজ তুমি নেই বহুদিন হয়ে গেল। যাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি, সেই তুমি নেই আজ কতদিন হলো! অথচ পৃথিবীর কী অদ্ভুত নিয়ম, তোমাকে হারিয়ে দিব্যি বেঁচে আছি, কাজ করছি, খাচ্ছি, ঘুরছি, আড্ডা দিচ্ছি, হাসছিও, অবসরে স্মার্টফোনের স্ক্রিনে ডুবে থাকছি। সবকিছুই চলছে তার স্বাভাবিক নিয়মে। কোথাও কোনো কিছুই থেমে থাকছে না ।
যেন কোথাও কেউ নেই একেকটা সময় এমন অনুভব হয়। সারাক্ষণ এক আকাশ শূন্যতা গ্রাস করে রাখে আমাকে। সারাদিনের ব্যস্ততায় শোক ভুলে থাকলেও রাত গভীর হলে, একা থাকলে তোমার স্মৃতি আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে । বুকভরা শূন্যতা, বুকে তোমার স্মৃতি নিয়ে পাথর হয়ে বেঁচে আছি। অতটা দূর থেকে তুমি কি সেটা বুঝতে পারো? জানো কি তোমাকে ছাড়া এই আমি আজ কতটা অসহায়?
বিজ্ঞাপন
এখনও বিশ্বাস হয়না তুমি নেই। মনে হয় যেন একটা দুঃস্বপ্ন। যেটা ঘুম ভেঙে গেলেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। কাজ শেষে এখনও বাসায় ঢুকে অভ্যাশবশত তোমার ঘরে যাই, কিন্তু তুমি নেই। তোমার বিছানা, তোমার বালিশ, তোমার চেয়ারে হাত বুলিয়ে তোমার স্পর্শ খুজে ফিরি। তোমার ব্যবহৃত জামা, ওড়না বুকে জড়িয়ে মাঝে মাঝে বসে থাকি, চোখ ভিজে আসে। সবই আছে, শুধু তুমিই নেই। মোবাইল ফোনে তোলা তোমার ছবিগুলোর দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকি। তখনও চোখ ভিজে আসে।
এখনও রাত গভীর হলে তোমাকে দেখতে তোমার ঘরে ভুল করে পা বাড়াই, নামাজ শেষে মোনাজাতে এখনও তোমার সুস্থতার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া চেয়ে ফেলি।
তোমাকে কতদিন হলো প্রাণখুলে ডাকি না, এই অভ্যেস তো আজন্মকালের। এটা কিভাবে ভুলবো বলো। অবশ্য ভুলতে চাইও না। তাই তো প্রায়ই তোমার ঘরে ঢুকে অস্ফুট স্বরে তোমাকে মা মা বলে ডাকি। জোরে ডাকলে সবাই পাগল ভাবতে পারে যে!
ও মা,
তুমিও তো আমাকে সবথেকে বেশিই ভালোবাসতে। তুমি কি একটু স্বপ্নে এসেও আমার সঙ্গে দুটো কথা বলতে পারো না? আমি যে ছটফট করে মরছি মা, শুধু প্রশান্তি পেয়েছি কালকে স্বপ্নে তোমার হাসিমুখ দেখে। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাকে ভীষণ ভালো রেখেছেন। দুনিয়ায় তো কম কষ্ট সহ্য করোনি। আখিরাতে তার প্রতিদান ইনশাআল্লাহ তুমি পাবে।
ও মা,
বহুদিন অসুস্থ হয়ে ছিলে, অনেক সময় বিরক্ত হয়ে অনেক কথাই বলেছি! কেউ না জানুক, তুমি তো জানো সেগুলো আমার মনের কথা নয়। ও মা, আমার সেই অনিচ্ছাকৃত ভুলগুলো তুমি মাফ করে দিও, আর জান্নাতে তোমার পাশে একটুখানি জায়গা রেখো। মহান আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া, যেন আখিরাতে তোমাকে পাই, যেন তোমার কাছেই তোমার সন্তান হয়ে থাকতে পারি ।
মা,
কে আছে তোমার মতো করে ভালোবাসবে? জ্বর হলে এখন কপালে আর তোমার হাতের স্পর্শ পাই না। গরুর গোশত রান্না হলে আর কেউ সেটা আলাদা করে তুলে রাখে না । আমার পছন্দের কোনো খাবার লুকিয়ে কেউ রাখে না আমার জন্য। কেউ আর বার বার নাম ধরে ডাকে না। বার বার কানে ভেসে আসে অসুস্থ অবস্থায় আমাকে তোমার সেই ডাক। তখন যে নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না মা। প্রচুর কষ্ট করেছো মা তুমি। মহান আল্লাহ দুনিয়াবী কষ্ট থেকে তোমাকে মুক্তি দিয়েছেন। রাব্বিরহাম হুমা কামা,রাব্বাইয়ানী সাগীরা। মহান আল্লাহর কাছে সবসময় বলি, আল্লাহ যেন তোমাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন।