ছবি: প্রতীকী

মা, তুমি একটা কথা খুব বলতে, কবে বড় হবি, কবে বড় হবি। তোমার ছোট্ট তানভীর আজ সত্যিই বড় হয়ে গেছে। স্কুল মাঠে ফুটবল খেলে কাদা শরীরে বাড়ি ফেরা আর তোমার মার খাওয়া চঞ্চল ছেলেটা আজ অনেক শান্ত, স্থির। একা একা শপিং করতে না পারা তোমার অবুঝ ছেলে আজ ‘বড় ছেলে’ হয়ে বাড়ির সবার জন্য শপিং করে। পরিস্থিতি মানুষকে যে কতটা বদলে দেয়! তোমার হাতের পোলাও, পায়েস, হালিম অনেক বেশি মিস করি প্রতিনিয়ত। তার চেয়ে বেশি মিস করি পরীক্ষার রাতগুলোতে তোমার উপস্থিতি। 

তোমার মাস্টার্স পরীক্ষার সময় আমার জন্ম হয়েছিল। তোমার একাডেমিক জীবনের শেষ কিছু পরীক্ষায় আমি তোমার খুব কাছে ছিলাম অজান্তেই। তাই বুঝি আমার পরীক্ষার আগের রাতগুলোতে তুমি পুরোটা সময় আমার সাথে জেগে থাকতে। আমার সব চাপ তুমি পাশে থেকে সামলে নিতে অনায়াসে। কোনো পরীক্ষায় আমাকে একা ছেড়ে দাওনি তুমি। তোমার অস্থিরতা আমাকে আরো বেশি সাহস আর শক্তি জোগাতো। তাইতো আমার সব সফলতার ভাগিদার তুমিও।

তবে এখন পরীক্ষার রাতগুলোতে নিজেকে বড্ড একা লাগে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে তোমাকে ভীষণ মনে পড়ে। যখন ঝিমিয়ে পড়ি, তোমার মতো কেউ জাগিয়ে দেয় না। পরীক্ষায় যাওয়ার আগে কেউ মুখে তুলে খাইয়ে দেয়না, সঙ্গেও যায় না কেউ। তোমাকে খুব মনে পড়ে মা তখনও। আমি পরীক্ষার হলে আছি আর তুমি কেন্দ্রের বাইরে বসে দোয়া করছো না, এমনটা কখনও হবে আমি কল্পনাও করিনি। তোমার একসময়ের অপ্রয়োজনীয় দুশ্চিন্তাগুলো এখন আমার খুব প্রয়োজন।

মায়ের প্রতি প্রচণ্ড ভালোবাসায় ঈশ্বরচন্দ্র নদী সাঁতরে পার হয়েছিলেন, মাইকেল মধুসূদন বিলেত ছেড়ে ফিরে এসেছিলেন, কিন্তু আমি যে এখানে এসেছি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে। তাইতো তোমার জন্যই তোমার দৃষ্টির সীমানার বাইরে বড় হয়ে উঠছে তোমার পাগলটা। জানি সব ভালো থাকা মানেই সুখ নয়, তারপরও তোমার স্নেহের প্রতীক্ষায় থেকে প্রতিটি মুহূর্তে ভালো থাকার জন্য তোমার দোয়া চাই মা। খুব ভালোবাসি তোমায় মা।