যেসব কারণে ধীরে ধীরে কার্যক্ষমতা হারায় কিডনি
শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি। এই অঙ্গটি দেহ থেকে ক্ষতিকর পদার্থকে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। এছাড়া এই অঙ্গের ওপর ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ, সোডিয়াম-পটাশিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা, একাধিক হরমোন তৈরির ভারও থাকে। তাই বৃক্কের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়াটা খুবই জরুরি।
যদিও আমাদের মধ্যে কম সংখ্যক মানুষই এই অঙ্গের প্রতি সুবিচার করেন। এক্ষেত্রে কিছু কিছু বদভ্যাসের কারণে অঙ্গটি ধীরে ধীরে খারাপ হতে থাকে। তখন কিডনি নিজের কাজও ঠিকমতো করতে পারে না। ফলে শরীরে একাধিক উপসর্গ দেখা দেয়।
বিজ্ঞাপন
একবার এই অঙ্গের ক্ষতি হয়ে গেলে তা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন। তাই প্রথম থেকেই এই অঙ্গটির স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। তাহলে ক্রনিক কিডনি ডিজিজের মতো ঘাতক অসুখ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
এক্ষেত্রে কিডনিকে সুস্থ রাখতে চাইলে আমাদের কয়েকটি বদভ্যাস ছাড়তে হবে। নাহলে সমস্যা কখন যে আপনার শরীরে বাসা বাঁধবে হবে, তা ধরতেও পারবেন না।
১. নিয়মিত পেইনকিলার খাওয়া : ব্যথার সমস্যায় অনেকেই ভুগে থাকেন। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই অসুখে আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই পেইনকিলার খেয়ে থাকেন। আর এই পেইনকিলার কিন্তু কিডনির জন্য খুবই খারাপ। নিয়মিত ব্যথানাশক ওষুধ খেলে জটিল থেকে জটিলতর কিডনির সমস্যা ধরা দিতে পারে। এমনকি হতে পারে সিকেডি ও অ্যাকিউট কিডনি ডিজিজ। তাই নিয়মিত পেইনকিলার খাওয়া চলবে না। আর একান্তই খেতে হলে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
২. লবণ যত নষ্টের গোড়া : লবণ খাওয়ার বদভ্যাস অনেকেরই রয়েছে।। এনারা ভাত থেকে পেয়ারা, শসা- প্রায় সব খাবারেই লবণ মিশিয়ে খান। তবে জানলে অবাক হয়ে যাবেন, এই অভ্যাসের কারণেই কিন্তু কিডনির বড়সড় ক্ষতি হয়ে যায়। আসলে লবণে রয়েছে সোডিয়াম। এই সোডিয়াম কিন্তু ব্লাড প্রেশার বাড়িয়ে দিতে পারে। আর ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধি পেলে কিডনির গুরুতর ক্ষতি হয়। এমনকি ক্রনিক কিডনি ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও তৈরি হয়। তাই কাঁচা লবণ খাওয়া চলবে না।
৩. পর্যাপ্ত জলপান না করা : কিডনি শরীর থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকর খনিজ ও বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়। আর এই কাজটা সে করে প্রস্রাব তৈরির মাধ্যমে। এদিকে প্রস্রাব তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় জলের। এক্ষেত্রে আপনি যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জলপানই না করেন তবে কিডনি তো নিজের কাজটাই করতে পারবে না। আর এমনটা নিয়মিত চলতে থাকলে কিডনিতে স্ট্রোন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। এমনকি সমস্যা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে গেলে সিকেডি পর্যন্ত হতে পারে। তাই দিনে অন্তত ৩ থেকে ৪ লিটার জলপান করা চাই।
৪. মাংস প্রীতিই সর্বনাশের কারণ : অনেকেই মাংস খেতে খুব ভালোবাসেন। এনারা প্রায় রোজই মাংস খেয়ে থাকেন। জানলে অবাক হয়ে যাবেন, নিয়মিত মাংস খেলে রক্তে অ্যাসিডের পরিমাণ অনেকটাই বেড়ে যায়। এই কারণে কিডনিতে অ্যাসিডোসিস হয়। এই অসুখে দেহে তৈরি হওয়া অতিরিক্ত অ্যাসিডকে কিডনি বের করে দিতে পারে না। এর থেকে কিডনিতে একাধিক সমস্যা হয়ে থাকে। তাই নিয়মিত মাংস খাওয়া ছাড়ুন।
৫. বেশি মিষ্টি খেলেই মুশকিল : মিষ্টি বা চিনি শরীরের জন্য খুবই খারাপ। ব্লাড সুগার লেভেল বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে এর কোনও জুড়ি নেই। আর রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটা বেড়ে গিয়ে থাকলে তা কিডনির সরাসরি ক্ষতি করে। তাই কোনও মতেই মিষ্টি বা চিনি মিশ্রিত খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া যাবে না। এইটুকু করতে পারলেই আপনার কিডনি থাকবে একদম ফিট। কোনও সমস্যাই এই অঙ্গকে ধাওয়া করতে পারবে না।
কেএ