ফাইনালের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই সেমি-ফাইনালের উত্তাপে চলছে। সবার মধ্যেই চলছে অন্যরকমের এক উত্তেজনা। কিন্তু এই উত্তেজনা আপনার হার্টের জন্য ‘টাইব্রেকার’ হয়ে দাঁড়াবে না তো?

ক্রোয়েশিয়ার কাছে এ বারের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে টাইব্রেকারে হেরে গিয়েছে ব্রাজিল। সেলেকাওদের মন ভেঙে গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু শেষ গোল মিস করায় আপনিও নিশ্চয়ই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন? জানেন কি, এই অতিরিক্ত উত্তেজনা চাপ তৈরি করতে পারে আপনার হার্টের উপর। এই প্রসঙ্গে ভারতীয় কয়েকজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন।

হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘যে কোনো সাময়িক ও অতিরিক্ত উত্তেজনা শরীরের পক্ষে ভালেঅ নয়। খেলা দেখবো, আনন্দ করবো, উপভোগ করব, উদ্বিগ্নও হবো। কিন্তু এটার সঙ্গে খুব বেশি জড়িয়ে গেলে সেই অতিরিক্ত উত্তেজনা শরীরে সমস্যা তৈরি করে।” কোনওকিছুই ‘অতিরিক্ত’ হওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয়, এমনটাই ইঙ্গিত বিশেষজ্ঞদের।

কুণাল সরকার আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত উত্তেজিত হয়ে পড়লে আমাদের শরীরের মধ্যেও নানা ধরনের পরিবর্তন ঘটে। সাময়িকভাবে হরমোনের ভারসাম্যে পরিবর্তন হয়। মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে গেলে সে শরীরের বিভিন্ন প্রান্তে সিগন্যাল পাঠাতে থাকে। এতে শরীরের মধ্যে নানা প্রতিক্রিয়া শুরু হয়। যেমন হঠাৎ করে পালস রেট, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া। এতে হার্টের স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হয়। হৃদপিণ্ডকে তখন বেশি কাজ করতে হয়। আর যদি কারও হাইপারটেনশন, হার্ট ফেলিওর অথবা অন্য কোনো হৃদরোগ থাকে তাহলে অতিরিক্ত উত্তেজনা এড়িয়ে চলা উচিত।’

অতিরিক্ত উত্তেজনা কীভাবে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে? এ নিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, ‘অতিরিক্ত উত্তেজনায় হার্ট রেট স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। এতে হার্টও স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। এর জেরে শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়।’ 

ফুটবল বিশ্বকাপের যে উন্মাদনা, তা বাঙালির মনে দাগ কাটে। এমনটাই দাবি অ্যাডাল্ট অ্যান্ড চাইল্ড আমেরিকান বোর্ডের মনোরোগ চিকিৎসক রঞ্জন ঘোষের। তিনি বলেন, ‘অনেকক্ষণ ধরে খেলা দেখছেন, আর গোল হলেই হঠাৎ করে উত্তেজিত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, এক্ষেত্রে মাথা ঘোরার উপসর্গ দেখা দেয়। এটা বয়স্কদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।’

তিনি আরও রঞ্জনবাবু জানিয়েছেন, রাতে একা টিভির সামনে বসে খেলা দেখলে মানসিক চাপ বাড়ে। এই মানসিক চাপও কিন্তু হৃদরোগের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।

৪ বছর পর বিশ্বকাপ হচ্ছে। একমাস ধরে হয়তো না-ঘুমিয়ে খেলা দেখছেন আপনি। বেশিরভাগ মানুষই ভাবছেন, এক মাসের জন্য এটুকু এ দিক ও দিক হয়তো করেই নেওয়া যায়। কিন্তু এই একমাসের অনিয়মই আপনাকে উপহার দিতে পারে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার।