কোলেস্টেরলকে বলা হয় নীরব ঘাতক। পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগ ও স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে। আর এর অন্যতম প্রধান কারণই হলো শিরা ও ধমনীর প্রাচীরে কোলেস্টেরল জমে যাওয়া। 

কোলেস্টেরল আবার একা আসে না, নিজের সঙ্গে জমায় অন্যান্য স্নেহ পদার্থও। ফলে ক্ষতি হয়ে যায় রক্তপ্রবাহের। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’। 

হৃদ্‌যন্ত্রের সংলগ্ন শিরা বা ধমনীতে এই ধরনের অবরোধ দেখা দিলে তা যেমন হৃদ্‌রোগের কারণ হতে পারে তেমনই মস্তিষ্কে ঘটলে বাড়ে স্ট্রোকের আশঙ্কা।  

এই কোলেস্টেরল ঠেকাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় হলো খাদ্যতালিকা। তালিকায় সঠিক খাবার থাকা কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। 

মনে রাখতে হবে কোলেস্টেরল মানেই খারাপ কিছু নয়। বরং কোলেস্টেরল শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজেও লাগে। কোষের মেমব্রেন বা পর্দা গঠনের অন্যতম উপাদান কোলেস্টেরল। দেহে ভিটামিন ডি এবং টেসটসটেরন ও ইস্ট্রোজেন হরমোনের উৎপাদনেও এটি দরকারি।  

আরও পড়ুন : লবণ বেশি খেলেও ক্ষতি, কম খেলেও ক্ষতি 

কোলেস্টেরলের মোটামুটি দুটি ভাগ- এলডিএল ও এইচডিএল। এলডিএল হলো খারাপ কোলেস্টেরল। অন্যদিকে ভালো কোলেস্টেরল হলো এইচডিএল। এলডিএল বাড়লেই সমস্যা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এক্ষেত্রে এইচডিএল বাড়তে শুরু করলে শরীরের পক্ষে ভালো। 

রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে চাইলে যেসব কাজ অবশ্যই করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে- অ্যালকোহল পানের অভ্যাস থাকলে ছেড়ে দিতে হবে। ওজন কমাতে হবে, ধূমপান ছাড়তে হবে। গরুর মাংস, খাসির মাংস এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

এছাড়া রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে জলপাইয়ের তেল এবং জলপাইয়ের তৈরি খাদ্য,  সবজি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট-সম্বৃদ্ধ ফল, ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, অপ্রক্রিয়াজাত দানাজাতীয় খাবার, মাছ  ইত্যাদি খাবার তালিকায় রাখতে হবে। 

এছাড়া উচ্চ মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকার কারণে দশকের পর দশক ধরে ডিম খাওয়া নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেক গবেষণার ফলাফলে বলা হয় যে, ডিম খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।  

আরও পড়ুন : শীত এলেই কোষ্ঠকাঠিন্য বাড়ে? কী করবেন, কী খাবেন?

একটি ডিমের কুসুমে প্রায় ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল থাকে, যা মার্কিন খাদ্য নীতিতে থাকা দৈনিক গ্রহণযোগ্য কোলেস্টেরলের মাত্রার অর্ধেক। এই নীতি অনুযায়ী প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল গ্রহণ করা যায়। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য : কোলেস্টেরল কী, এর ক্ষতিকর দিক, কীভাবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এ লেখাতে সেসব সম্পর্কে কেবল প্রাথমিক ধারণা দেওয়া হয়েছে। যেকোনো প্রয়োজনে, এ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে ও চিকিৎসার জন্য এ লেখার ওপর নির্ভর না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

এনএফ