ওজন কমানো আর স্বাস্থ্যকর ও সঠিক পদ্ধতিতে ওজন কমানো এক বিষয় নয়। না খেয়ে থাকলেই আপনার ওজন কমে যাবে কিন্তু সেটি মোটেও স্বাস্থ্যকর কোনো উপায় নয়। অনেক সময় দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে আমরা ভুল ডায়েট, ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি করি কিংবা অপকারী কোনো বিষয় বেছে নেই। এতে করে ওজনও হয়তো কমবে তবে তা শরীরে স্বাস্থ্যকর কোনো প্রভাব রাখবে না। 

ওজন কমানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় ভুলে যায়। স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার প্রতি তাদের খেয়াল থাকে না; যেমন জীবনযাপনে পরিবর্তন, পছন্দের কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার বাদ দেওয়া এবং ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন ইত্যাদি। ওজন কমাতে চাইলে অবশ্যই এই ভুলগুলো এড়িয়ে চলবেন-

ফ্যাট পুরোপুরি বাদ দেওয়া

যারা ওজন কমাতে চাইছেন তাদের কাছে ফ্যাট পুরোপুরি বাদ দেওয়ার বিষয়টি বেশ আকর্ষণীয় একটি উপায় বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো, ওজন কমানোর ক্ষেত্রে যেসব সাধারণ ভুল করা হয় তার মধ্যে এটি একটি। ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিন শরীরের কার্যকারিতা ঠিক রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেইসঙ্গে ভিটামিন এ, কে এবং ডি সহ অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ শোষণ করার জন্য ফ্যাট দরকার হয়। এখন নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, খাবারের তালিকা থেকে ফ্যাট পুরোপুরি বাদ দিলে আপনার শরীর কেবল শক্তি থেকেই বঞ্চিত হবে না, সেইসঙ্গে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজও পাবে না। ফ্যাট মুক্ত খাবারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চিনির পরিমাণ বেশি থাকে যা আপনাকে দ্রুত ক্ষুধার্ত করে তোলে। ফলে বার বার খাওয়ার কারণে শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালোরি জমা হয়।

গ্লুটেন মুক্ত ডায়েট

ওজন কমানোর জন্য অনেকে গ্লুটেন মুক্ত খাবার বেছে নেন যদিও এর বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ নেই। এই সুযোগে বিক্রেতারা গ্লুটেন মুক্ত নাস্তা, চকোলেট, কেক ইত্যাদি নিয়ে এসেছেন কিন্তু সেগুলো অতিরিক্ত লবণ ও চিনি দিয়ে ভরা থাকে। এসব খাবারের উচ্চ মাত্রায় গ্লাইসেমিক সূচক রয়েছে সেইসঙ্গে এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ পরিবর্তন করতে পারে। এই খাবারগুলো কৃত্রিম মিষ্টি, প্রিজারভেটিভস ও রঙে ভরা থাকে। তাই ওজন কমানোর যাত্রায় গ্লুটেন মুক্ত খাবারকে সঙ্গী করার কোনো প্রয়োজন নেই।

না খেয়ে থাকা

না খেয়ে থাকলে তা আপনার কেবল আপনার শরীরকেই অসুস্থ করে না সেইসঙ্গে এটি মানসিকভাবে ভাবেও অসুস্থ করে দেয়। না খেয়ে থাকার ফলে খাদ্যাভ্যাসেও বিশৃঙ্ক্ষলা সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে না খেয়ে থাকা কোনো সমাধান নয়। বরং এর কারণে কিছু মারাত্মক সমস্যা যেমন খাবার দেখলেই ভয় পাওয়া এবং অন্যান্য মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করে। না খেয়ে থাকার ফলে আপনার হজম প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, এটি মেটাবলিজম প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয় এবং শরীরের শক্তিও নিঃশেষ করে দেয়। ফলে আপনার প্রতিদিনের কাজগুলো বাধাগ্রস্ত হয়।

সুষম খাবার না খাওয়া

সুষম খাবার খেলে শরীর সব ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে। এসব পুষ্টি শরীরের জন্য জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। এগুলো শরীরের উন্নতি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন। সেইসঙ্গে সুষম খাবার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্যও জরুরি। অনেকে ওজন কমানোর প্রক্রিয়া হিসেবে খাবার থেকে কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে থাকেন। এই পুষ্টি উপাদান বাদ দেওয়ার কারণে মারাত্মক দুর্বলতা, মাথাব্যথা, ক্লান্তি ও আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। মনে রাখবেন, ওজন কমানোর কোনো সংক্ষিপ্ত রাস্তা নেই। আপনি যদি স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চান তবে সব সময় সুষম খাবার গ্রহণ করতে হবে।

অস্বাভাবিক প্রত্যাশা

আপনি যদি আশা করেন যে এক সপ্তাহের মধ্যেই মোট ওজনের দশ ভাগের এক ভাগ কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে তবে তা আপনাকে কেবল হতাশই করবে। ওজন কমানোর প্রচেষ্টা অবশ্যই উৎসাহদায়ক তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত প্রত্যাশা রাখবেন না। গবেষণায় উঠে এসেছে, ওজন কমানোর লক্ষ্য পূরণ না হলে অনেকে দ্রুত হতাশ হয়ে যায় এবং আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এর বদলে পনের দিন বা আরও বেশি সময়ে এক-দুই কেজি ওজন কমানোর লক্ষ্য পূরণ করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এতে আপনার লক্ষ্য পূরণ সহজ হবে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের আগ্রহও বজায় থাকবে।

মূল্যবান যেকোনো কিছু পেতে হলেই ব্যায় করতে হয়। সফলতার সংক্ষিপ্ত কোনো উপায় নেই, এটি ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও সত্যি। তাই বাড়াবাড়ি কোনোকিছু না করে বরং মধ্যম পন্থা বেছে নিন। জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনুন, স্বাস্থ্যকর ও প্রয়োজনীয় খাবার গ্রহণ করুন এবং ঘুমের রুটিনে পরিবর্তন আনুন। সবকিছুর সঠিক সমন্বয় থাকলে কাঙ্ক্ষিত ওজন পাওয়া অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

এনডিটিভি অবলম্বনে