মানসিক স্বাস্থ্য প্রত্যেকের জীবনেই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু এটিই সবচেয়ে বেশি উপেক্ষা করা হয়। সচেতনতার অভাবের কারণে মানুষেরা এই বিষয়ে কথা বলতেও আগ্রহ বোধ করে না। মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার অনেক উপায় এখনও অনাবিষ্কৃত। মানসিক স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ এলে আমরা পরিবারের গুরুত্বের কথা বলি। কিন্তু অনেক সময় পরিবারের মধ্যে প্রজন্মগত পার্থক্য আমাদের মানসিক শান্তি ও সুখের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 

কর্মক্ষেত্রেও এমনটা দেখা যায়

বয়সের কারণে মতের পার্থক্যের বিষয়টি কেবল পরিবারের ভেতরেই নয়, এটি অনেক কর্মক্ষেত্রেও প্রচলিত। দুই প্রজন্মের মানুষের একে অন্যের সঙ্গে মানিয়ে চলাই এক্ষেত্রে একমাত্র সমাধান। এই মানিয়ে চলা বেশিরভাগ সময়েই কঠিন হয়ে যায়। কারণ এক প্রজন্মের তৈরি করা নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা অপর প্রজন্মের জন্য ক্লান্তিকর হয়ে উঠতে পারে।

কিছু বিশ্বাস আঁকড়ে থাকা

তরুণ প্রজন্ম নার্সিসিস্ট আর বয়স্করা জ্ঞানী; তরুণেরা কিছুই জানে না আর বয়স্করা সব জানে; তরুণেরা দয়ালু আর বয়স্করা আক্রমণাত্মক; এরকম অনেক মিথ্যা বিশ্বাস ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে যার আসলে কোনো যুক্তি নেই। 

‘হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল-অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজির গবেষণার ক্ষেত্রে ভিন্ন বয়সের কারণে বিশ্বাস বা চিন্তার পার্থক্যকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এক প্রজন্মের তৈরি করা নিয়ম বা বিশ্বাস অন্য প্রজন্মের ওপর প্রভাব ফেলে। যেমন ধরুন বয়স্করা ধরেই নেয় যে তরুনেরা সুবিধাবাদী।’

এই থিওরি তরুণ প্রজন্মকে ভুল ধারণা দেয়। তারা ভাবে যে অন্যরা তাদের স্বার্থপর ও সুবিধাবাদী মনে করে যদিও তারা তা নয়। এ ধরনের ভুল ধারণা পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে তৈরি হতে পারে যে কারণে তরুণ প্রজন্ম নিজেদের নিয়ে সব সময় দ্বিধান্বিত থাকে।

প্রযুক্তির পার্থক্য

বর্তমান প্রজন্ম এমন একটি পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছে যেখানে প্রযুক্তি নানাভাবে আমাদের জীবনে জড়িয়ে গিয়েছে। বয়স্করা অনেক দেরিতে প্রযুক্তির এসব সুবিধা পেয়েছে, যখন বেশিরভাগই এর গুরুত্ব তেমন একটা অনুভব করতে পারছে না। যেখানে মধ্য বয়স্করা পুরো পৃথিবীকে নন-টেক থেকে টেকনোলজিতে সমৃদ্ধ হতে দেখেছে। তরুণ প্রজন্মের প্রায় সবাই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল যা কিনা বয়স্কদের কাছে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হয়।

বর্তমান প্রজন্ম পাসওয়ার্ড, স্ক্রিনলক ও নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি ইত্যাদির সঙ্গে বসবাস করে অভ্যাস্ত। যেখানে তাদের মা-বাবা কিংবা নানা-দাদারা এক পরিবারে ১০-১৫জন একসঙ্গে বসবাস করতো। তাদের প্রাইভেসি বলতে তেমন কিছু ছিল না। যেখানে বর্তমান প্রজন্মের অনেক বেশি প্রাইভেসির প্রয়োজন হয়। বয়স্কদের বেশিরভাগেই প্রাইভেসির গুরুত্ব বোঝে না কারণ তারা এটা দেখে অভ্যাস্ত নয়। এই বিষয়টি দুই প্রজন্মের মধ্যে মতের পার্থক্য সৃষ্টি করে।

বোঝার পার্থক্য

দুই প্রজন্মের মানুষ একে অপরকে কখনোই পুরোপুরি বুঝতে পারে না। বয়স্করা মনে করে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল 
বড়দের, এদিকে তরুণ প্রজন্ম নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতেই পছন্দ করে। তারা একে অপরকে ‘প্রাচীন’ এবং ‘অপরাধী’ বলে আখ্যা দেয়।

শিশুরা মোবাইল ফোনে কিছু দেখলেই বয়স্করা তাকে খারাপ অভ্যাস বলে মনে করে। যদিও বেশিরভাগ সময় তারা জানেই না যে শিশুরা সেখানে আসলে কী দেখছে। হতে পারে তারা হয়তো ছড়ায় ছড়ায় মজার কোনো পড়া শিখছে। অপরদিকে বয়স্করা শিশুদের আচরণ নিয়ে কিছু বললে সেগুলোকে চাপিয়ে দেওয়া বা আধিপত্য করতে চাওয়া বলে মনে করা হয়।

বন্ধন তৈরি করুন

প্রজন্মগত এই পার্থক্য পারস্পারিক বোঝাপড়া, পরস্পরের প্রজন্মের নিয়মগুলো সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান এবং একে অন্যকে অনুভব করার মাধ্যমেই ঘোচানো সম্ভব। পরিবার হোক কিংবা কর্মক্ষেত্র দুই প্রজন্মের মানুষের একসঙ্গে মিলেমিশে থাকার মনোভাব থাকা জরুরি। মতের অনেক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাদের পাশাপাশি থাকা দরকার। তর্কের জায়গা থাকুক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠুন। ভ্রান্ত বিশ্বাসে গা ভাসাবেন না। নিজের কথাগুলো বলুন।