বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাইল ডিভাইসের সুযোগ-সুবিধা পাওয়াটা নিঃসন্দেহে আশীর্বাদ। কিন্তু এসব উপকারী গ্যাজেটই ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে যখন সেগুলো আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়। বর্তমানে স্মার্টফোনে আসক্তি খুবই পরিচিত সমস্যা হয়ে উঠেছে। এটি কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রেই নয়, শিশুরাও সমান ভূক্তভোগী।

ন্যাশনাল কমিশন ফর প্রোটেকশন অফ চাইল্ড রাইটস- এর একটি জরিপে উঠে এসেছে ভয়াবহ চিত্র। জরিপে অংশগ্রহণকারী শিশুর মধ্যে ২৩.৮০% শিশু জানিয়েছে যে তারা ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে স্মার্টফোন ব্যবহার করে। ৩৭.১৫% শিশু সব সময় বা ঘন ঘন স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে তাদের মনোযোগের মাত্রা কমে গেছে। 

২০১১-২০১৭ পর্যন্ত প্রকাশ হওয়া ৪১টি গবেষণার মূল্যায়ণ করে ২০১৯ সালে এক গবেষণায় জানানো হয় যে, ২৩% শিশু অবাধে স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই সতর্কতামূলক তথ্য জানার পর আপনি কী করবেন? এরপর আপনার উচিত সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধান করা। সেইসঙ্গে শিশুর সৃজনশীলতা বাড়ানোর প্রতি মনোনিবেশ করা।

স্মার্টফোন আসক্তির ক্ষতিকর দিক

স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে শিশুর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আচরণগত সমস্যা থেকে শুরু করে ঘুমে ব্যাঘাত, হতাশা, স্থুলতা, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা এবং সামাজিকতা না শেখার মতো আরও অসংখ্য সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে স্মার্টফোনের অবাধ ব্যবহারের কারণে।

স্মার্টফোনের আসক্তি শিশুর মধ্যে অদ্ভুত আচরণের জন্ম দিতে পারে। তখন তারা ক্রমাগত এবং বারবার একই ধরনের কাজ করতে থাকে। যেমন বারবার ফোন চেক করা, বেশিক্ষণ ফোন থেকে দূরে থাকতে না পারা, ব্যাটারি কমে যাওয়া নিয়ে বা চার্জ দেওয়া নিয়ে সব সময় চিন্তিত থাকা ইত্যাদি। এই আচরণগুলো শিশুর দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করলে তাদের স্মার্টফোন ব্যবহার নিয়ে উদ্বিগ্ন হোন।

যেসব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হবেন

শিশুর স্মার্টফোন আসক্তি বুঝতে পারার জন্য এই বিষয়গুলোর দিকে খেয়াল করুন-

- ইনসমনিয়া বা ঘুমে ব্যাঘাত

- ফোন ব্যবহার করতে না দিলে রেগে যাওয়া বা উদ্বিগ্ন হওয়া

- রাগ এবং আগ্রাসী স্বভাব

- একা থাকা এবং পছন্দের মানুষ থেকেও দূরে থাকা

- ফোন খুঁজে না পেলে মন খারাপ করা।

স্মার্টফোন আসক্তি থেকে শিশুকে দূরে রাখবেন যেভাবে

শিশুর স্মার্টফোন আসক্তি দূর করা আপনার জন্য অনেকটা কঠিন হয়ে উঠতে পারে। তবে এটি অসম্ভব নয়। বিশেষ করে যদি আপনি এক্ষেত্রে সৃজনশীল কোনো উপায় খুঁজে বের করতে পারেন। জেনে নিন কিছু করণীয়-

- প্রতিদিন পরিবারের সদস্যরা খানিকটা সময় একসঙ্গে কাটান। সেই সময়টুকু সবাই স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন।

- স্মার্টফোন ব্যবহারের নির্দিষ্ট শিডিউল রাখুন।

- শিশুর ঘুমের আগে তার হাতে ফোন দেবেন না।

- কতটুকু সময় স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারবে তা নির্দিষ্ট করে দিন।

- পুরস্কার হিসেবে বা রাগ করে শিশুর হাতে স্মার্টফোন দেবেন না।

- শিশুর আগ্রহ বা পছন্দের বিষয়গুলো খুঁজে বের করে সেগুলো করতে দিন। হতে পারে তা ছবি আঁকা, গান শেখা কিংবা লেখালেখি।

- স্মার্টফোন ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো শিশুকে জানান।

ভালো উদাহরণ তৈরি করুন

অভিভাবক হিসেবে আপনার কিছু দায়িত্ব রয়েছে। শিশুর জন্য ভুল কোনো উদাহরণ তৈরি করবেন না। বড়রাও কিন্তু শিশুর মতোই ফোনের প্রতি আসক্ত হতে পারে। তাই যখন শিশুর সামনে থাকবেন, ফোন ব্যবহার থেকে দূরে থাকুন। এর বদলে শিশুর সঙ্গে ভালো সময় কাটান। 

টাইমস অব ইন্ডিয়া অবলম্বনে