করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীকে করে দিয়েছে এলোমেলো। কোমলমতি শিশুরা স্কুলের পরিবর্তে গৃহবন্দি হয়ে ইন্টারনেটে লেখাপড়া করবে, এমনটা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি। শিক্ষাব্যবস্থায় ইন্টারনেটের ব্যবহার নিঃসন্দেহে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার পরিচয়। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই প্রায় সব দেশের মতো বাংলাদেশেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অগণিত শিশুকে জুম অ্যাপের মাধ্যমে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়েছে। এখনো চলছে ইন্টারনেটের সহায়তায় লেখাপড়া। 

বাংলাদেশের সব শিশুকে এখনো জুম অ্যাপের সহায়তায় লেখাপড়ার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে লেখাপড়ার পাঠ্যসূচি টেলিভিশনের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাত্র-ছাত্রীদের বোঝানোর চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে লকডাউনের সময় এবং অনেক দেশে এখনো ইন্টারনেটের সহায়তায় চলছে লেখাপড়া। ভাইরাসের সংক্রমণ কমানোর জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে অগণিত শিশু এখনো গৃহবন্দি। রাজধানী ঢাকার বাইরের শিশুরা বাসার বাইরে খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু রাজধানী ঢাকার কথা যদি বলি, এখানে অধিকাংশ শিশু একেবারেই গৃহবন্দি। হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ, অধিকাংশ স্কুল একটি বিল্ডিংয়ের মাঝেই সীমাবদ্ধ। খুব কম সংখ্যক স্কুলে রয়েছে খেলার মাঠ।

বাসাগুলোও ছোট কিংবা মাঝারি আকৃতির ফ্ল্যাট। শিশুদের খেলাধুলার তেমন সুযোগ নেই। করোনাভাইরাসের পূর্বে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ ছিল। লকডাউনের কারণে দীর্ঘ সময় শিশু-কিশোরেরা স্কুলে যেতে পারেনি। এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এভাবে হাঁটাচলা, শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শিশুরা এগিয়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকির দিকে। বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের জন্য খেলাধুলা ভীষণ জরুরি। শারীরিক পরিশ্রম, দৌড়-ঝাঁপ তাদের হাঁড়ের বৃদ্ধি ও বর্ধনে সহায়তা করে। ঘটায় মানসিক বিকাশ। কিন্তু এখনকার শিশুরা লেখাপড়ার বোঝা বহন করতে গিয়ে হিমশিম খায়।

রাজধানী ঢাকাসহ সব জায়গায়ই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে চলেছে। সেজন্য অধিকাংশ পিতা-মাতা সন্তানের অনেক চাহিদা পূরণ করতে পারছেন না। করোনাভাইরাস পুরো পৃথিবীর অর্থনীতিতে ফেলেছে বিরূপ প্রভাব। বাংলাদেশের অগণিত মানুষ অর্থনৈতিকভাবে হয়েছে সীমাহীন ক্ষতিগ্রস্ত। এই পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে কোমলমতি শিশুরাও। কিছু পিতা-মাতা সন্তানকে ছুটির দিনগুলোতে বেড়াতে নিয়ে যেত, রেস্টুরেন্টে খাবার খেত, শিশুদের শখ মেটাত। কিন্তু অনেক পিতা-মাতা এখন শিশুদের সেসব চাহিদা মেটাতে পারছেন না। অগণিত প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই হারিয়েছেন চাকরি। এই ক্ষতির নেতিবাচক প্রভাব যেন আমাদের শিশুদের ওপর না পড়ে, পিতা মাতা ও পরিবারের সবাইকে সেই চেষ্টা করতে হবে।

দামি কোনো রেস্টুরেন্টে বা বিলাসবহুল কোনো জায়গায় বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ না থাকুক, বাসার আশেপাশে কোথাও অন্তত বেড়াতে নিয়ে যান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের হাঁটাচলা ও খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। নয়তো যেসব শিশুর পিতা-মাতা ও রক্তের সম্পর্কীয় আত্মীয় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে কোলস্টেরল জনিত সমস্যায় আক্রান্ত; সেসব শিশুরা বাড়ন্ত বয়সে গৃহবন্দি থাকলে তারাও দ্রুত এই ধরনের অসুখে আক্রান্ত হবে।

অনেক শিশু থাকে স্থুল গড়নের। তারা খেলাধুলা করতে না পারলে আরোও বেশি ওজন বেড়ে যাবে। বছরের পর বছর ওজন বাড়তে থাকলে শিশুরাও এগিয়ে যাবে ফ্যাটি লিভারের দিকে। ফ্যাটি লিভার মানে লিভারে ফ্যাট জমে যাওয়া। শিশু বয়স থেকেই যদি নিয়মিত ফাস্ট ফুড খাওয়া হয় আর সেইসঙ্গে খেলাধুলা ও হাঁটাচলার অভাব হয়, তাহলে শিশুর রক্তের মধ্যেও চর্বি জমতে পারে। পারিবারিক ইতিহাস ও আত্মীয়-স্বজনের (রক্তের সম্পর্কের) মধ্যে কারো ফ্যাটি লিভার বা হাই কোলস্টেরলের সমস্যা থাকলে, পরিবারের সবাইকে শিশুদের প্রতি দিতে হবে বিশেষ মনোযোগ।

শিশু-কিশোররাও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।  অনেক দেশের ছেলেমেয়েরা এখন টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশেও অনেক তরুণ তরুণী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। যা মোটেও কাম্য নয়। তাই শিশুর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের প্রতি যথেষ্ট মনোযোগী হতে হবে আমাদের।

আজকাল ফাস্টফুড হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। শিশু যেন সেসব খাবারের প্রতি আকৃষ্ট না হয়। বাড়ন্ত বয়সের শিশুকে সব ধরনের খাবারে অভ্যস্ত করতে হবে। কিন্তু লকডাউনে দীর্ঘদিন বাসায় বন্দি থাকার জন্য অধিকাংশ শিশু খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখনো স্কুল বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ইন্টারনেটে ক্লাস করার কারণে শিশুর ওজন যেন বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুর সঠিক বিকাশ ও বর্ধনের দায়িত্ব পরিবারের সবার।

এইচএন/এএ