শিশু দেরিতে কথা বলে কেন?
পাঁচজন শিশুর মধ্যে একজন তাদের সম বয়সীদের তুলনায় ধীর গতিতে কথা শেখে। কখনও কখনও শিশুরা কিন্ডারগার্টেনে প্রবেশের সময় এই বিলম্ব কাটিয়ে ওঠে। তবে এই দেরিতে কথা বলা বা শেখা অনেক সময় অন্তর্নিহিত সমস্যার সংকেত দেয়। সেজন্য অভিভাবকদের বিশেষ সতর্ক দৃষ্টি খুব প্রয়োজন। এই সমস্যা লক্ষ্য করলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত। যাতে শিশুটি দ্রুত এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারে।
স্পিচ ডিলে কী?
বিজ্ঞাপন
স্পিচ বলতে বোঝায় কথা বলা এবং সঠিকভাবে শব্দ গঠন করার ক্ষমতা। স্পিচ ডিলে বা দেরিতে কথা বলা শিশুরা শব্দ ব্যবহার করতে পারে, কিন্তু আপনার সেগুলো বুঝতে অসুবিধা হবে। তারা কথা বলতেও কষ্ট করতে পারে কারণ তাদের শব্দ গঠনে কষ্ট হয়।
কীভাবে বুঝবেন?
* ১২ মাসের মধ্যে যোগাযোগের জন্য অঙ্গভঙ্গি ব্যবহার করতে পারবে না।
* ১৮ মাসের মধ্যে কণ্ঠের ব্যবহারের বদলে অঙ্গভঙ্গি পছন্দ করবে।
* ১৮ মাসের মধ্যে শব্দ অনুকরণ করতে সমস্যা হয়।
* ১৮ মাসের মধ্যে সাধারণ মৌখিক অনুরোধগুলো বুঝতে পারবে না
* কথা অনুকরণ করতে পারে কিন্তু দুই বছরের মধ্যে শব্দ বা বাক্যাংশ নিজে নিজে তৈরি করতে পারে না।
* দুই বছরের মধ্যে তাদের চাহিদার কথা বলতে পারে না।
* দুই বছরের মধ্যে সহজ নির্দেশাবলী অনুসরণ করতে পারে না।
* মা-বাবা বা পরিবারের সবার তাদের সন্তানের দুই বছর বয়সে যা বলে তার অর্ধেক এবং তৃতীয় জন্মদিনের মধ্যে তার কথার অন্তত ৭৫% বুঝতে সক্ষম হওয়া উচিত। একটি শিশু চার বছর বয়সে কী বলে তা প্রায় প্রত্যেকেরই বুঝতে সক্ষম হওয়া উচিত।
স্পিচ ডিলে বা দেরিতে কথা বলার প্রধান কারণ
স্পিচ ডিলে বা দেরিতে কথা বলা কিছু শিশুর ক্ষেত্রে বিকাশগত বা শারীরিক সমস্যার জন্য হতে পারে। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট কারণ থাকে না। স্পিচ ডিলে বা দেরিতে কথা বলার সবচেয়ে সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে ৪টি কারণ সম্পর্কে জেনে নিন-
ওরাল-মোটর সমস্যা
কথা বলার জন্য কার্যকরী পেশীগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের যে অংশ, সেখানে সমস্যা হলে শিশুর কথা বলতে দেরি হতে পারে। শিশু ঠোঁট, জিহ্বা এবং চোয়ালের নড়াচড়ার সমন্বয় করতে না পারায় শব্দ তৈরি করতে কষ্ট হয়। মস্তিষ্ক মুখের পেশীগুলোর সঙ্গে সংযোগ না করলে শিশুরা কথা বলার জন্য প্রয়োজনীয় পেশীগুলোকে নাড়াতে পারে না। আরেকটি ওরাল-মোটর ডিসঅর্ডার হচ্ছে যখন মুখ, ঠোঁট এবং জিহ্বা নিয়ন্ত্রণকারী পেশীগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, সেগুলো খুব দুর্বল হয়।
অটিজম
স্পিচ ডিলে অটিস্টিক শিশুদের বেলায় বেশি দেখা যায়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, অটিজম নির্ণয় করা ৩-৪ বছর বয়সীদের মধ্যে অর্ধেক তাদের বয়সের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কথা বলতে পারে না। অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অমৌখিকভাবেও যোগাযোগ করতে অসুবিধা হয়, তাই তারা ১২ মাস বয়সের মধ্যে তাদের চাহিদা প্রকাশ করতে পারে না। অনেকক্ষেত্রে তারা একই শব্দ পুনরাবৃত্তি করতে থাকে, সাধারণত একটি বাক্যাংশ যা তারা টিভি শো, ভিডিও গেম বা চলচ্চিত্রে শুনেছিল সেটাই বার বার বলতে থাকে যা অনেকেই বুঝতে পারে না।
শ্রবণ সমস্যা বা শ্রবণ প্রক্রিয়াকরণ ব্যাধি
শুনতে অসুবিধা হলে তা শিশুর কথা বলার, ভাষা ব্যবহার করার এবং অন্যদের বোঝার ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। কিছু শিশুর শ্রবণ সমস্যা আছে যাকে বলা হয় অডিটরি প্রসেসিং ডিসঅর্ডার। এটি শিশু যা শোনে তা বুঝতে বাধা দেয়।
বুদ্ধিবৃত্তিক অক্ষমতা
বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধী শিশুদের বিকাশগত সমস্যা হয়। যা তাদের কথা বলাসহ সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশকে প্রভাবিত করে। এই শিশুদের অন্যরা বুঝতে পারে এমন শব্দ তৈরি করতে বা উচ্চারণ করতে সমস্যা হতে পারে। তারা সহজে বাক্যগুলোকে একত্রিত করতে বা ভাষা বুঝতে পারে না। স্পিচ ডিলে সম্পর্কে মনে রাখার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে প্রাথমিক রোগ নির্ণয় এবং দ্রুত চিকিত্সা শুরু। নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমেই এই শিশুরা এই চ্যালেঞ্জকে কাটিয়ে উঠতে পারে।