ট্রেডমিল কেমন করে এল?
বর্তমান যুগে শরীরচর্চার জন্য ট্রেডমিল ব্যবহৃত হলেও প্রকৃতপক্ষে এটি তৈরি করা হয়েছিলো কারাবন্দিদের শাস্তি দেয়ার জন্য। যারা ট্রেডমিল ব্যবহার করেন তাদের কাছে আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে কারাবন্দিদের শাস্তি দেয়ার উদ্দেশ্যে যে জিনিস তৈরি হয়েছিলো সেই জিনিস কেন আজ ব্যায়াম বা শরীরচর্চায় কাজে লাগছে? এক সময়ের কারাবন্দিদের শাস্তি দেয়ার উপকরণ রাতারাতি কীভাবে ব্যায়াম করার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে? কেন কারাবন্দিদের মতো নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন? সেই বিষয়ে জানা যাক-
বিজ্ঞাপন
ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেডমিলে দৌঁড়ানোর অভ্যাস রয়েছে অনেকের। শরীরকে সাবলীল রাখার জন্য অনেকে ট্রেডমিলের মাধ্যমে ব্যায়াম করেন। কিন্তু অনেকেই ট্রেডমিলের ইতিহাস সম্পর্কে জানেন না। ঘরে বা জিমনেশিয়ামে ব্যবহৃত ট্রেডমিল শরীরচর্চার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়নি। বরং এটি তৈরি হয়েছিলো কারাবন্দিদের শাস্তি দেয়ার একটি উপায় হিসেবে। এটি তৈরি করা হয় ভিক্টোরিয়ান যুগে। উনবিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে ব্রিটিশ কয়েদখানাগুলোর শাসনব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় কাউকে মৃত্যুদণ্ড বা নির্বাসনে পাঠানো হতো। বন্দিদের দিনের পর দিন নোংরা কারাগারে একা থাকতে হতো। যেখানে একাকীত্ব কঠিনভাবে জেঁকে বসতো তাদের ওপর।
কারাবন্দিদের ওপর এমন অমানুষিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ব্রিটেনের বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। এসময় ইংরেজি ভাষার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সও প্রতিবাদে অংশ নেন। তাদের প্রতিবাদের উদ্দেশ্য ছিলো কারাবন্দিদের নতুন করে সংশোধনের সুযোগ দেয়া। ফলে ব্রিটিশ কারা কর্তৃপক্ষ কারাবন্দিদের সংশোধনের সুযোগ হিসেবে ট্রেডমিলের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করে। এভাবেই আজকের ট্রেডমিলের যাত্রা শুরু হয়।
১৮১৮ সালে ব্রিটিশ প্রকৌশলী স্যার উইলিয়াম কিউবিট এই ট্রেডমিল আবিষ্কার করেন। যা সেই সময়ের কয়েদখানাগুলোতে ব্যাপক সাড়া ফেলে। কারাগারগুলোতে বন্দিদের শাস্তির অংশ হিসেবে ট্রেডমিলে দৌঁড়াতে বলা হতো। কিন্তু তখনও কেউ ভাবেনি কারাবন্দিদের শাস্তির উপকরণই মানুষ পরবর্তীতে শরীরচর্চার কাজে ব্যবহার করবে। সেই সময় যন্ত্রটি ট্রেডহুইল নামে পরিচিত ছিলো। অনেকে আবার একে ‘এভারলাস্টিং স্টেয়ারকেস’ বা অনবরত ঘূর্ণায়মান সিঁড়ি হিসেবে অভিহিত করেন।
ট্রেডমিলের আবিষ্কারকের বাবা মিলের একজন শ্রমিক ছিলেন। সেই সূত্রে কারখানার মিলগুলো কীভাবে কাজ করে সেই বিষয়ে উইলিয়াম কিউবিট ভালোভাবে জানতেন। সেই জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে তিনি ট্রেডমিলের নকশা তৈরি করেন। যন্ত্রটি আনুভূমিক অক্ষ বরাবর ঘুরতো এবং তাতে একসঙ্গে অনেক বন্দিকে উঠিয়ে হাঁটানো হতো। তার আবিষ্কৃত যন্ত্রটিতে ধাপ ছিলো চব্বিশটি। এই ধাপগুলো প্যাডেলের মতো কাজ করতো। কয়েদিরা এর উপর যখন অবস্থান করতো তখন হুইলটি অনবরত ঘুরতে থাকতো। কেউ থামতে পারতো না। একসঙ্গে সবাইকে হাঁটতে হতো নতুবা পড়ে যেতে হতো।
এইচএকে/এইচএন/এএ