শীত বিদায় নিয়েছে প্রকৃতি থেকে। হয়ে গেছে বসন্ত বরণও। রঙিন ফুল, আমের ‍মুকুল জানান দিচ্ছে বসন্তের। শীতে জমিয়ে মশলাদার খাবার, নানা স্বাদের পিঠাপুলি তো খেলেন; গরমের শুরুতেও কি খাবারের ধরন একইরকম থাকবে? আমাদের শরীর আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য কিছুটা সময় চায়, চায় বাড়তি খানিকটা যত্ন। গরমের সময়েও যদি আপনার খাদ্যাভ্যাস শীতের মতো থাকে তবে শরীর তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না। ফলে দেখা দেবে নানা অসুস্থতা। শীতের সময়ে যে পানি কম পান করার অভ্যাস করেছিলেন, সেই অলসতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। পান করতে হবে পর্যাপ্ত পানি। এর কারণ হলো, গরমের সময়ে প্রচুর ঘাম হওয়ার কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানির অনেকটাই বের হয়ে যায়। সেই ঘাটতি পূরণের জন্য গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। এই সময়ে সুস্থ থাকার এটি প্রথম শর্ত।

সবজি রাখুন পাতে

শীতের অনেক সবজির পাশাপাশি গরমেরও নানা সবজি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। সেসব সবজি প্রতিদিন খেতে হবে। বেশিরভাগ সবজিতে থাকে পর্যাপ্ত পানি। যার ফলে সেসব সবজি খেলে গরমে পানির ঘাটতি অনেকটাই পূরণ করা যায়। এসময় প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়া, লাউ, বরবটি, পুঁইশাক, পালংশাক, কাঁচাকলা, বেগুন, টমেটো ইত্যাদি পাতে রাখতে পারেন। পাশাপাশি খেতে পারেন তেতো সবজি। এক্ষেত্রে করলা সবার কাছেই পরিচিত। গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে করলা খাওয়ার অভ্যাস আছে অনেকেরই। তেতো খাবার আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।

দই খান প্রতিদিন

দই সুস্বাদু একটি খাবার, সন্দেহ নেই। কিন্তু এটি স্বাদের চেয়েও বেশি উপকারী। দই খেলে শরীরে নানাভাবে উপকার মেলে। আপনি যদি প্রতিদিন দুপুরে খাওয়ার পরে একবাটি দই খেতে পারেন তবে হজমে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। এর কারণ হলো, দই হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রোবায়োটিকের ভালো উৎস হলো দই। এটি শরীরকে ভেতর থেকে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। তবে বেশি স্বাদের জন্য প্রতিদিন মিষ্টি দই খেলে চলবে না। খেতে হবে টক দই। সবচেয়ে ভালো হয় বাড়িতে তৈরি করে নিতে পারলে।

সালাদ হতে পারে উপকারী

সবরকম স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে প্রথম দিকেই থাকবে সালাদের নাম। বিভিন্ন কাঁচা সবজি বা ফল দিয়ে তৈরি সালাদ খেতে যেমন সুস্বাদু, উপকারীও বেশ। কখনো কখনো সালাদের সঙ্গে যোগ হয় মুরগির মাংস, নানা ধরনের বাদাম কিংবা ছোলা, চিংড়ি ইত্যাদি। এতে এর পুষ্টিমান আরও বেড়ে যায়। শসায় ক্যালরি থাকে অল্প, ফলে বেশি খেলেও ওজন বাড়ার ভয় থাকে না। আবার উচ্চ আঁশ সম্পন্ন হওয়ায় এটি হজমশক্তিও বাড়ায়। শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে শসা। ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ফোলেইট সমৃদ্ধ লেটুসও রাখতে পারেন সালাদে। উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ পুদিনাও শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে।

খেতে পারেন শুকনো ফল

শুকনো ফল সব সময়ের জন্যই স্বাস্থ্যকর খাবার। গরমে হালকা নাস্তার বিকল্প হতে পারে শুকনো ফল। মূল খাবারের ফাঁকে ক্ষুধা পেলে খেতে পারেন একমুঠো শুকনো ফল। অন্যান্য উপাদানের মতো চিনিও আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে তা হতে হবে প্রাকৃতিক চিনি। গরমে ঘামের কারণে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। সেই ঘাটতি পূরণে কাজ করতে পারে কিশমিশ, খেজুর, শুকনো এপ্রিকট ইত্যাদি।

এড়িয়ে চলুন প্রসেসড ফুড

প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার খেতে যতই ভালোলাগুক না কেন, এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মোটেই উপকারী নয়। তাই এ জাতীয় খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। প্রসেসড ফুডে স্বাদ বাড়ানোর জন্য নানা উপাদান যোগ করা হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। গরমের সময়ে এ জাতীয় খাবার খেলে তা শরীরে নানা সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে হলে প্রসেসড ফুড বা প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার এড়িয়ে চলুন।

ভাজাপোড়া ও বাইরের খাবার বাদ দিন

শীতে সাধ মিটিয়ে ভাজাভুজি খেয়েছেন কিন্তু গরমে তা বাদ দিতে হবে। ডুবো তেলে ভাজা মচমচে খাবার, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার পাতে রাখা যাবে না। এসময় এ ধরনের খাবার খেলে পেটে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। মিষ্টি খাবারের বদলে মধু খেতে পারেন। কার্বো হাইড্রেড শরীরে গিয়ে শর্করায় পরিণত হয় তাই এসময় কার্বো হাউড্রেড জাতীয় খাবার খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে। কার্বো হাইড্রেড খেলে তার সঙ্গে সমন্বয় করে খেতে হবে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। গরমে অনেকেই পথের পাশ থেকে শরবত, জুস ইত্যাদি কিনে খান। শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে বাইরের খাবার একেবারেই খাওয়া চলবে না।

অতিরিক্ত চা-কফি নয়

চা কিংবা কফি ছাড়া চলতে পারেন না অনেকেই। কিন্তু গরমের সময়ে অতিরিক্ত চা-কফি না খাওয়াই ভালো। এতে ক্লান্তি দূর হওয়ার বদলে আরও বেড়ে যেতে পারে। এসময় রোদের তেজ প্রখর থাকে বলে বাইরে বের হলে ছাতা ব্যবহার করুন। নয়তো রোদের কারণে অনেক সময় হিট স্ট্রোকের ভয় থাকে। বাইরে বের হলে অবশ্যই সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। 

এইচএন/এএ