একতরফা ভালোবাসা?
প্রেম ভেঙে যাওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে কষ্টদায়ক। এই বেদনা কেবল ভুক্তভোগীর পক্ষে বোঝা সম্ভব। তবে এর চেয়েও কষ্টকর কোনো কিছু যদি থেকে থাকে, তা হলো একতরফা ভালোবাসা। এই একতরফা ভালোবাসায় যারা জড়াননি তাদের পক্ষে এর কষ্ট বোঝা সম্ভব নয়। আপনি কোনো একজন মানুষকে ভালোবাসেন কিন্তু তাকে বলতে কিংবা বোঝাতে পারছেন না। তিনি আপনার চোখের সামনেই থাকেন, প্রতিদিন দেখা হতে পারে, কথা হতে পারে কিন্তু মুখ ফুটে ভালোবাসি বলার সাহস আর হয় না। এটি হলো একতরফা ভালোবাসার ধরন। আবার এমনও হতে পারে, আপনি হয়তো তাকে মনের কথা জানিয়েছেন কিন্তু সে আপনাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। এক্ষেত্রে না পাওয়ার বেদনার সঙ্গে যোগ হয় অপমানবোধ। তার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হলেও এই বেদনা সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। তাতে জীবনের মূল্যবান সময়ের অনেকটাই ব্যয় হয়ে যায় এমন একজন মানুষের পেছনে যে আসলে কখনোই আপনার ছিল না।
বিজ্ঞাপন
আমাদের মনের ওপর সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটি সম্ভবও নয়। তাই কখন কার প্রেমে পড়বেন না তা আগে থেকে ঠিক করে রাখা যায় না। কিন্তু একতরফা ভালোবাসার জন্য আপনার যে মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তা বাঁচানোর কি কোনো উপায় নেই? কী করলে এই কষ্ট কম হবে, তার কথা কম মনে পড়বে না কিংবা মনে পড়লেও আর আগের মতো মন খারাপ হবে না তা জেনে রাখতে হবে।
মনকে প্রস্তুত রাখুন
তাকে ভালোবাসি বলে দিলেই যে সেও বিপরীতে ভালোবাসি বলবে এমন কোনো কথা নেই। কারণ আপনি তাকে মনে মনে ভালোবেসেছেন কিন্তু আপনাকে সে ভালো না-ই বাসতে পারে। তাই তাকে কোনরকম অনুরোধ বা জোর করবেন না। শুধু তাকে মনের কথা জানিয়ে দিন। এরপর সে যদি সময় চায় তবে তাকে সময় দিন আর যদি মুখের ওপর না বলে দেয় তাহলে সেটুকু হজম করার মতো মানসিক শক্তিও রাখুন। স্বপ্ন সত্যি না হলে বাস্তবতায় তাল মিলিয়ে চলতে যেন আপনার সমস্যা না হয়। ফিরিয়ে দিয়েছে বলে তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক নষ্ট করবেন না। পুরো বিষয়টি হালকাভাবে নিলে খুব বেশি কষ্ট পেতে হবে না।
তাকে বলে দিন
অনেকেই আছেন যারা মনের কথা মুখ ফুটে বলতে পারেন না। আর এ কারণেই সারাজীবন মনের ভেতর গুমড়ে কাঁদে গোপন ভালোবাসা। তাই সময় থাকতে তাকে মনের কথা জানিয়ে দিন। নয়তো পরে এই না বলার জন্য আফসোস হতে পারে। আপনি যদি একবার তাকে মনের কথা জানিয়ে দেন তাহলে আর আফসোস থাকবে না। অন্তত ফিরিয়ে দিলেও নিজেকে সান্ত্বনা দিতে পারবেন যে আপনি তাকে মনের কথা জানিয়েছিলেন। এরপর সে যদি আপনার সত্যিকারের ভালোবাসা হয় তাহলে সেই সম্পর্ক সামনে এগোতে পারে। আর আপনি যদি একতরফা ভালোবেসে থাকেন তাহলে হয়তো শুরুর আগেই ছেড়ে আসতে হতে পারে। পুরোটাই নির্ভর করছে আপনাদের দুজনের সম্পর্কের ওপর। তাই যেভাবে বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন যেভাবেই বলুন। সম্ভব হলে সামনাসামনি বলুন। নয়তো ফোনে, মেসেজে কিংবা চিঠিতে- যেভাবে মন চায় সেভাবেই বলুন। তাকে জানিয়ে দিন ভালোবাসার কথা।
কষ্ট হলেও মেনে নিন
যদি সে আপনাকে ফিরিয়ে দেয় তবে আপনার কষ্ট হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এতোদিন ধরে আপনি মনে মনে যে ভালোবাসা লালন করে এসেছেন তা হঠাৎ ভেঙে গেলে কষ্ট হবেই। তবে এই কষ্ট সামলে নিতে হবে আপনাকেই। নিজেই নিজের পাশে থাকুন। নিজেকে বোঝান এমন কষ্ট জীবনে আসাটা খুব স্বাভাবিক। বরং তাকে না পাওয়াটাই হয়তো আপনার জন্য কোনো না কোনোভাবে কল্যাণকর। তাই নিজের প্রতি যত্নশীল হোন। নিজেকে ভালোবাসুন। নিজেকে সময় দিন। তার জন্য মন খারাপ না করে এমন কোনো কাজ করুন যাতে মন ভালো থাকে। তাতে কষ্ট কমবে অনেকটাই।
আত্মবিশ্বাস হারাবেন না
অনেকেই প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হলে তা মেনে নিতে পারেন না। তখন তারা আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন। তারা ভাবেন, আমার মধ্যে কোনো কমতি থাকার কারণেই হয়তো সে আমাকে যোগ্য ভাবেনি। কিন্তু এমনটা করা যাবে না একেবারেই। কারণ আপনি যদি আপনাকে ভালো না বাসেন তবে অন্য কেউ ভালোবাসবে না। তাই নিজের প্রতি যত্নশীল হোন। সুন্দরভাবে পরিপাটি করে নিজেকে সাজান। ভালোলাগার কাজ করুন। কাছেই কোথাও বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে আসতে পারেন। এতে মন অনেকটাই ফুরফুরে হবে। কেটে যাবে মন খারাপের মেঘ।
হতাশ হবেন না
এর মানে হলো আপনি আশা ধরে রাখবেন এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন। অনেকেই প্রেমে প্রত্যাক্ষ্যাত হলে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন। কেউ কেউ ভালোলাগার মানুষটিকে নানাভাবে বিরক্ত করে থাকেন, সারাক্ষণ তার খবর নেয়ার চেষ্টা করেন। এমন আচরণ করা যাবে না। এসব হতাশাগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ থেকে নিজেকে বাঁচাতে হবে। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে নতুন করে শুরু করতে হবে। সুন্দর ও হাসিখুশি জীবন যাপনের জন্য দুঃখ-কষ্টগুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখতে হবে।
এইচএন/এএ