ব্যারিস্টার সুমন-ইশরাতকে ১০০ টাকা করে জরিমানার রায় প্রকাশ
কয়েকবার আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় অংশ নিয়েও অনুত্তীর্ণ হন ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকী। তাকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।
এর বিরুদ্ধে রিট পিটিশন দাখিল করেন দুই আইনজীবী। পরে আদালত গেজেটকে বৈধতা দিয়ে রায় দেন। সেই রায় প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে একশ টাকা করে জরিমানার কথা বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর সইয়ের পর সম্প্রতি ৭৭ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার রায়ের অনুলিপি ঢাকা পোস্টের হাতে এসেছে। দুই আইনজীবীকে জরিমানা করার কারণ হিসেবে রায়ে বলা হয়েছে, আইনজীবী হলেও তারা প্রত্যেক অন্যায়, আইনের অপপ্রয়োগ ও আইনভঙ্গের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে মামলা করতে পারবেন না।
মামলার পিটিশনাররা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হলেও জুম্মন সিদ্দিকীর বিষয়ে হাইকোর্টের অনুমতিতে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। এ অনুমতিতে সর্বস্তরের জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। তাই পিটিশনারদের এ মামলা করার কোনো লোকাস স্ট্যান্ডি নেই।
এ মামলা চলাকালীন পিটিশনাররা জুম্মন সিদ্দিকীর পরিবার, তার আইনজীবী ও হাইকোর্টের বিচারককে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক মন্তব্য করেছেন। পিটিশনাররা আদালতের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এতে জুম্মন সিদ্দিকীর ও তার পরিবারের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে।
জুম্মন সিদ্দিকীকে হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করা থেকে বিরত রেখে সংবিধানের ৪০ অনুচ্ছেদে বর্ণিত পেশার স্বাধীনতার অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। পিটিশনারদের ওপর বিপুল পরিমাণ জরিমানা আরোপ করা উচিত। কিন্তু তাদের বয়স ও পেশাগত অভিজ্ঞতার সময়সীমা বিবেচনায় প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা করা হলো।
২০২০ সালের ৮ নভেম্বর বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেট প্রকাশ বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে একশ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত। বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
রিট মামলার শুনানির এক পর্যায়ে ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার রুলও জারি করেন আদালত। পরে আপিল বিভাগে হাইকোর্টের এ রায় স্থগিত হয়ে যায়।
২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে দেখিয়ে জারি করা গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
২০১৯ সালের ২১ নভেম্বর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় বারবার অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও হাইকোর্টের বিচারপতির ছেলে জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় কয়েকবার অংশ নিয়েও কৃতকার্য হতে পারেনি হাইকোর্টের বিচারপতির ছেলে মো. জুম্মন সিদ্দিকী। অথচ ২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করা হয়।
তাই রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১ (১) (খ) ও ৩০ (৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়। জুম্মন সিদ্দিকীসহ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
এমএইচডি/আরএইচ