প্রয়াত জবি শিক্ষক রাজীব মীরের বরখাস্ত অবৈধ, পাওনা দিতে নির্দেশ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রয়াত মীর মোশারেফ হোসেনকে (রাজীব মীর) বরখাস্তের সিদ্ধান্ত বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে রাজীব মীরের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সব পাওনা বেতন-ভাতাদি অবিলম্বে পরিশোধ করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তার স্ত্রী ও সন্তানকে এ টাকা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
আদালতে প্রয়াত রাজীব মীরের স্ত্রী সুমনা খানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. নাসিম ইসলাম রাজু।
শুক্রবার সকালে ডেপুটি ব্যারিস্টার কাজী মাঈনুল হাসান হাইকোর্টের রায়ের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত বছরের ২৪ নভেম্বর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোশাররফ হোসেনকে (রাজীব মীর) বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, এ মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শুরু হয়।
রাজীব মীরের স্ত্রী সুমনা খানকে রিটে পক্ষভুক্ত করে বুধবার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের হাইকোর্ট বেঞ্চে রুল শুনানি শুরু হয়।
ওই দিন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিম ইসলাম রাজু বলেছিলেন, অধ্যাপক মীর মোশারেফ হোসেন (রাজীব মীর) মারা যাওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর তার স্ত্রী সুমনা খান রিটে পক্ষভুক্ত হন।
ড. শাহদীন মালিক ঢাকা পোস্টকে বলেছিলেন, রুল শুনানি শেষে হাইকোর্ট যদি রাজীব মীরকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন, রুলটি অ্যাবসোলুট (যথাযথ) করেন, সেক্ষেত্রে স্ত্রী হিসেবে সুমনা খান ও তার সন্তান স্বামীর চাকরির সব আর্থিক সুযোগ সুবিধা পাবেন। এছাড়া প্রয়াত শিক্ষক রাজীবের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আদালতে মিথ্যা প্রমাণিত হলে তার পরিবারের জন্য এটা সন্তুষ্টির কারণ হবে।
২০১৮ সালের ৩০ জুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোশারেফ হোসেনকে (রাজীব মীর) বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুলে ওই শিক্ষককে কেন জ্যেষ্ঠতা ও বকেয়া সকল বেতনাদি সুবিধাসহ স্বপদে পুনর্বহাল করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মীর মোশারেফ হোসেন।
রিটে বলা হয়, অধ্যাপক মীর মোশারেফ হোসেনের বিরুদ্ধে গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টের কোনো কপি তাকে সরবরাহ করা হয়নি। এর ফলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সাক্ষ্য প্রমাণ সম্পর্কে তাকে পূর্ণাঙ্গভাবে অবহিত না করেই তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে যা বেআইনি ও অবৈধ।
একাধিক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মীর মোশারেফ হোসেনকে ২০১৭ সালের ১০ জুলাই স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। তিনটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৪তম সিন্ডিকেট সভায় তার বিরুদ্ধে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
চেন্নাইয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাজীব মীর মারা যান।
এমএইচডি/এসকেডি