রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্ত নিয়ে পিবিআইয়ের কর্মকর্তা মো. শামীম আক্তারের ব্যাখ্যায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

রোববার (৩০ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেন, এই দেশ ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা (তদন্ত কর্মকর্তা) যা ইচ্ছে তাই করবেন সেটা মেনে নেওয়া যায় না। আপনাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত সম্পন্ন করতে। কিন্তু সেই নির্দেশনাও প্রতিপালন করেননি। পরে আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে তাকে পুনরায় লিখিত ব্যাখ্যা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী তদন্ত না করার বিষয়ে তার কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। ব্যাখ্যা দিতে আজ হাইকোর্টে হাজির হন রাজশাহীর পুঠিয়ার শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের মো. শামীম আক্তার।

পুঠিয়ার সড়ক ও পরিবহন মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন নুরুল ইসলাম। নির্বাচনের ফলাফলকে কেন্দ্র করে ২০১৯ সালের ১০ জুন তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে নিগার সুলতানা আট জনের নাম উল্লেখ করে পুঠিয়া থানায় এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু সেই এজাহারটি লিপিবদ্ধ না করে ওই থানার তৎকালীন ওসি সাকিল উদ্দিন আহমেদ ছিড়ে ফেলেন। পরে সাদা কাগজে বাদীর সই রেখে নিজেরাই একটা এজাহার সৃজন করে তা থানায় লিপিবদ্ধ করেন। যা পরে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক অনুসন্ধান কমিটির তদন্তে বেরিয়ে আসে। একইসঙ্গে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন্সকে (পিবিআই) নির্দেশ দেন।

রায়ে হাইকোর্ট বলেন, আদালত প্রত্যাশা করে যে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার মামলাটি তদন্ত তদারকিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবেন। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা/সংস্থাকে অবিলম্বে কেস ডকেট পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হলো। পিবিআইকে তদন্তকালে সংবাদদাতার মূল এজাহারের বর্ণনা, রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক অনুসন্ধান রিপোর্ট ও অনুসন্ধান কার্যক্রমে সাক্ষীদের সাক্ষ্য বিবেচনায় গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। কিন্তু হাইকোর্টের এই নির্দেশনা না মেনেই তদন্ত সম্পন্ন করেন তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের শামীম আক্তার। এই মামলার আসামি আবুল কালাম ওরফে আবু জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই জামিন আবেদনের শুনানিকালে হাইকোর্ট নির্দেশনা না মেনে তদন্ত করার বিষয়টি দেখতে পান। এরপরই তদন্ত কর্মকর্তাকে তলবের পাশাপাশি এ বিষয়ে তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।

রোববার হাইকোর্টে দাখিল করা ব্যাখ্যায় শামীম আক্তার বলেন, মামলার বাদীর কাছে প্রথমে এজাহার চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু উনি তা দেননি। এছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই তদন্ত সম্পন্ন করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

কিন্তু তার এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি হাইকোর্ট। পুনরায় ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকেও অব্যাহতি দেননি আদালত। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান এবং তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষে মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

এমএইচডি/এসএসএইচ