হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) অপেক্ষামান থাকা ২১ শিক্ষার্থীর ১৫ মিনিট দেরি হওয়ার কারণে তাদের ভর্তির কাগজপত্র জমা না নেওয়া কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে রোববার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।

এক সপ্তাহের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন ব্যারিস্টার এ এম মাসুম।

১৪ জানুয়ারি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) স্নাতক প্রথম বর্ষে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ১৩ জানুয়ারি ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৫ মিনিট দেরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছানোর কারণে ২১ শিক্ষার্থীর কাগজপত্র জমা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হতে পারেননি ওই শিক্ষার্থীরা।  

জানা যায়, বৃহস্পতিবার ১৩ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রিপোর্টিং কার্যক্রমে অংশ নিতে বলা হয় ওয়েটিং লিস্টে থাকা শিক্ষার্থীদের। কিন্তু চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের ২১ শিক্ষার্থী সোয়া ১২টায় ক্যাম্পাসে পৌঁছান। ভুক্তভুগী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বাস চালক ও চালকের সহযোগীর (শ্যামলী পরিবহন) গাফিলতির কারণে নির্ধারিত সময়ে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারেননি তারা।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মোস্তফা গালিব (অপেক্ষমাণ তালিকায় ১০১ সিরিয়াল) বলেন, ‘হাবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়ার জন্য খুবি, ইবি, শাবিপ্রবিতে ভর্তি হইনি। হাবিপ্রবির কৃষি অনুষদ আমার লক্ষ্য ছিল। বাসের চালক যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠা-নামা করানোয় অনেক সময় পার হয়ে যায়। তবে হাবিপ্রবি প্রশাসন মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য আমাদের মানবিক বিষয়টি বিবেচনায় নিলে না। আমি কোনোভাবেই বিষয়টি মেনে নিতে পারছি না।’

মারুফ ইসলাম অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে (অপেক্ষমাণ তালিকায় ৮৮২ সিরিয়াল) বলেন, ‘আমরা বুধবার (১২ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় বাসে ওঠার পরও পৌঁছাতে পারলাম না। বাসায় গিয়ে বাবা-মাকে কী বলব? যেহেতু আমাদের দোষ ছিল না, তাই কর্তৃপক্ষ চাইলেই বিষয়টি মানবিকতার খাতিরে আমলে নিতে পারত। আমরা সত্যিই ভর্তি পরীক্ষা ও ভর্তি কার্যক্রম নিয়ে হতাশ। এখন পর্যন্ত অনেক টাকাই নষ্ট হলো, কিন্তু কোথাও ভর্তি হতে পারলাম না।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশীদ বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। সবকিছু একটি নিয়মের মধ্য দিয়েই চলে। আমরা বেশ কয়েকদিন থেকেই শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিজ্ঞপ্তি, মেসেজ কিংবা ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে বিষয়গুলো ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে এসেছি। তারপরও এমন ঘটনা সত্যিকার অর্থে দুঃখজনক। আমরা চাই না এমন ঘটনা পরবর্তী সময়ে ফের ঘটুক। আগামীতে যারা রিপোর্টিং কিংবা ভর্তি হতে আসবে, তারা সবাই যাতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসে এসে পৌঁছায়।’

রিপোর্টিং কার্যক্রম শেষে ওই দিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ করা হয় (৭৮৭ জনের)। এর পরপরই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয় ছয়টি অনুষদের বিভিন্ন বিভাগে।

২১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন হাবিপ্রবি পড়ুয়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের একাংশ। কালক্ষেপণ করে শ্যামলী পরিবহনের বাসটি ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর কারণে ভর্তিপ্রার্থীরা হাবিপ্রবির প্রধান ফটকের সামনে বাসের গ্লাস ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।

এমএইচডি/ওএফ