সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগের পর এবার হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। চলতি (জানুয়ারি) মাসের মধ্যে হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ সম্পন্ন হতে পারে বলে জানা গেছে।

সুপ্রিম কোর্ট ও আইন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে, এবার হাইকোর্ট বিভাগে একসঙ্গে ১৫ জনের বেশিসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগের ক্ষেত্রে সততা, পেশাগত দক্ষতা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি অবিচলতা— এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।

রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সদস্য ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা— এ তিন ক্যাটাগরি থেকে প্রায় সমানসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।

উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ প্রসঙ্গে সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্য বিচারকদের নিয়োগদান করবেন।’

বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এটা তো মহামান্য রাষ্ট্রপতির বিষয়। তবে যতটুকু জানি, শিগগিরই হাইকোর্টে বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হবে।’

হাইকোর্টের নতুন বিচারপতি হিসেবে কারা নিয়োগ পাচ্ছেন— এ নিয়ে আইনাঙ্গনে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। নিয়োগের তালিকায় আলোচিত হচ্ছেন এমন  কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে ঢাকা পোস্টের বিশ্লেষণে।

রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তাদের মধ্যে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. মো. বশির উল্লাহ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নাসিমা কে হাকিম, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান মনির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ সাইফুজ্জামান, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিনুল ইসলাম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমএ কামরুল হাসান খানের (আসলাম) নাম সম্ভাব্য বিচারপতি হিসেবে আলোচনায় রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার এস এম মাসুদ হোসেন দোলন, ব্যারিস্টার এম শফিকুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এ কে এম রবিউল হাসান সুমন, অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাক রাজু, অ্যাডভোকেট বাকির উদ্দিন ভূঁইয়া, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহমুদ হোসেন, অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম ফরিদ, বৃহত্তর ফরিদপুর আইনজীবী কল্যাণ সমিতির সাবেক সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট দেওয়ান মো. ওবায়েদ হোসেন সেতু, অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদ সমীর ও ব্যারিস্টার আনিতা গাজী রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।

বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর, আইন সচিব মো. গোলাম সারোয়ার, আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর রুনা নাহিদ আক্তার, আইন মন্ত্রণালয়ের  যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. বদরুল আলম ভূঞা, ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ, পি আর এলে থাকা ঢাকার সাবেক জেলা জজ শওকাত আলী চৌধুরীর নাম সম্ভাব্য বিচারপতি হিসেবে আলোচিত হচ্ছে।

গত ৮ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হাইকোর্ট থেকে চার বিচারপতি নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। তারা হলেন- বিচারপতি বোরহান উদ্দিন, বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ ও বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান।

ওই চার বিচারপতি পদোন্নতি পেয়ে আপিল বিভাগে যাওয়ার পর বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৬ জনে। এর মধ্যে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় তিন বিচারপতিকে বিচারকার্য থেকে বিরত রেখেছেন প্রধান বিচারপতি।

সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর নয়জনকে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। তারা হলেন- বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি মো. জাকির হোসেন, বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামান, বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার, বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেন, বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার, বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হক ও বিচারপতি কাজী জিনাত হক।

দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর গত বছরের ১৯ অক্টোবর তাদের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে শপথবাক্য পাঠ করান ওই সময়ের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

গত ৩০ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের দ্বিতীয় জ্যেষ্ঠ বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ওই দিন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পরদিন প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এমএইচডি/আরএইচ/এমএআর/