এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনায় গঠিত সব তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে লঞ্চ, জাহাজসহ অভ্যন্তরীণ নৌযানের ফিটনেস সংক্রান্ত সব তথ্য ৯০ দিনের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এছাড়া লঞ্চ দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগীদের কেউ আর্থিক সহযোগিতার জন্য আবেদন করলে স্ব-স্ব জেলা প্রশাসককে তা বিবেচনা করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি লঞ্চ দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত ও নিহতদের তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার সেটাও আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি রিটের একসঙ্গে শুনানি নিয়ে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ, ব্যারিস্টার অনিক আর হক ও অ্যাডভোকেট আবু রায়হান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।

এর আগে ২৭ ডিসেম্বর লঞ্চ, জাহাজসহ নৌযানের ইঞ্জিনের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লাগার ঘটনায় হতাহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৌমিত্র সরদার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিট করেন। 

স্বরাষ্ট্র সচিব, নৌ পরিবহন সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিওটিএ’র চেয়ারম্যান এবং লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে।

আবেদনে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং সকল নৌযানে ইঞ্জিনের বিষয়ে প্রতিবেদন ও বৈধ লাইসেন্স/পারমিটের প্রতিবেদন কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।  

অপরদিকে গত ২৬ ডিসেম্বর এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫০ লাখ ও গুরুতর আহতদের ২০ লাখ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে আরেকটি রিট দায়ের করা হয়। রিটে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়।

অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ এ রিট দায়ের করেন। আজকে দুটি রিটের একসঙ্গে শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।

গত ২৩ ডিসেম্বর দিনগত রাত ৩টার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে পোনাবালিয়া ইউনিয়নের দেউরি এলাকার সুগন্ধা নদীতে বিস্ফোরণের পর আগুন ধরে যায়। এতে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছেন শতাধিক। আগুনে দগ্ধ ৮১ জনের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৬ জন। ১৯ জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। আর ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিলেন, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানানো হয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিলেন।

এ ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেছেন গ্রামপুলিশের এক সদস্য। ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান জানান, পোনাবালিয়ার গ্রামপুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।

এমএইচডি/এসএম