দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে জিম্মায় নিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জাপানি মা নাকানো এরিকোর দায়ের করা আপিল শুনানি অনুষ্ঠিত হবে রোববার (১২ ডিসেম্বর)।

শনিবার (১১ ডিসেম্বর) প্রকাশিত আপিল বিভাগের রোববারের কার্যতালিকায় মামলাটি ১৩ নম্বর ক্রমিকে রয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন ৫ বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।

জানা গেছে, আপিল বিভাগে উভয়পক্ষে শুনানি করবেন দেশের বাঘা বাঘা আইনজীবীরা। জাপানি মা নাকানো এরিকোর পক্ষে শুনানি করবেন প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, অ্যাডভোকেট আহসানুল করিম ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

অপরদিকে বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের পক্ষে লড়বেন প্রখ্যাত আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল ও অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম।

গত ৮ ডিসেম্বর দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে জিম্মায় নিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে জাপানি মা নাকানো এরিকোর দায়ের করা আপিল শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন চেম্বার আদালত।  

গত ৫ ডিসেম্বর দুই কন্যাকে নিজের জিম্মায় নিতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন জাপানি মা নাকানো এরিকো।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা বাংলাদেশে তাদের বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়, জাপান থেকে এসে মা বছরে তিনবার ১০ দিন করে দুই সন্তানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাতে পারবেন। জাপানি মায়ের আসা-যাওয়া ও থাকা-খাওয়ার সব খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।

রায়ে আদালত বলেন, রিটটি চলমান থাকবে। দুই মেয়ে বাবা ইমরান শরীফের হেফাজতে থাকবে। মা দেখা-সাক্ষাৎ এবং একান্তে সময় কাটানোর সুযোগ পাবেন। যেহেতু মা জাপানি নাগরিক, সেখানে থাকেন এবং কাজ করেন, তাই তিনি নিজের সুবিধামতো সময়ে বাংলাদেশে এসে সন্তানদের সঙ্গে প্রতিবার কমপক্ষে ১০ দিন করে সময় কাটাতে পারবেন। 

এ ক্ষেত্রে বছরে তিনবার বাংলাদেশে যাওয়া-আসাসহ ১০ দিন অবস্থানের যাবতীয় খরচ বাবা ইমরান শরীফকে বহন করতে হবে। এর বাইরে আসা-যাওয়ার খরচ মা বহন করবেন। ছুটির দিনে অন্তত দুইবার বাবা সন্তানদের মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবেন। 

এছাড়া আদালত নির্দেশনা দেন, গত কয়েকমাস বাংলাদেশে অবস্থান ও যাতায়াত খরচ বাবদ শিশুদের মা নাকানো এরিকোকে ১০ লাখ টাকা দেবেন বাবা ইমরান শরীফ। সাত দিনের মধ্যে তাকে এ অর্থ দিতে হবে। রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য উভয়পক্ষ আদালতে আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তা শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখবেন। প্রতি তিন মাস অন্তর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে।   

এদিকে জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন আদালত।

আদালতে জাপানি মায়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। বাবার পক্ষে ছিলেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল আইনজীবী ফিদা এম কামাল, অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ, ব্যারিস্টার কাজী মারুফুল আলম ও ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন।

গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন বাবা-মাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় থাকবে জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। সেখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। ফ্ল্যাটের ভাড়া উভয়পক্ষ বহন করবে। 

পরে নাকানো এরিকোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনাকে নিয়ে বেড়ানো বা মার্কেটে যাওয়ার জন্য বাইরে যেতে পারবেন জাপানি মা।

এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন গুলশানের ওই ফ্ল্যাটে দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনার সঙ্গে জাপানি মা নাকানো এরিকো রাতসহ ২৪ ঘণ্টা থাকবেন। বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ শুধু দিনের বেলা সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন। এই সময়ে ওই ফ্ল্যাটের ভাড়া শিশুদের বাবা-মাকে সমানভাবে বহন করতে হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশি বাবা ও জাপানি মায়ের এই দুই শিশু নিয়ে হাইকোর্টে আইনি লড়াই শুরু করেন তাদের মা নাকানো এরিকো। শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ দুই শিশুকে কৌশলে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন বলে অভিযোগ তার।

এমএইচডি/এসকেডি/জেএস