বাংলাদেশি নাগরিক শাহিনুর টিআইএম নবী ও তিন বছরের শিশুকে অস্ট্রেলিয়া থেকে ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। টিআইএম নবীর বাবা টিম নবীকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম। তাকে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার ফাইজা মেহরিন। অপরপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান।

এর আগে, গত ২৩ নভেম্বর সাদিকা সাঈদ ও শাহিনুর টিআইএম নবীর তিন বছরের শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগের ঘটনায় শিশুর দাদা টিম নবীকে তলব করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে টিম নবী যেন দেশত্যাগ না করতে পারে, এ বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ফেসবুকে উচ্চ আদালত নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার ঘটনায় তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়। এছাড়া আদালতের আদেশ অমান্য করে শিশুকে নিয়ে দেশত্যাগ করায় বাবা শাহিনুর টিআইএম নবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেন হাইকোর্ট। তার বাংলাদেশি পাসপোর্টের কার্যকারিতা সাময়িক স্থগিত করা হয়।

আদালতের আদেশে টিম নবী আজ হাজির হয়েছিলেন।

২২ নভেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাদিকা সাঈদ ও শাহিনুর টিআইএম নবীর তিন বছরের শিশুকে নিয়ে দেশ ছেড়ে অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন বাবা টিআইএম নবী।

আদালতে ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার জানান, ১৬ নভেম্বর সকালে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর টিআইএম নবী অস্ট্রেলিয়া চলে গেছেন।

গত ১৭ নভেম্বর সাদিকা সাঈদ ও শাহিনুর টিআইএম নবীর তিন বছরের শিশুসহ পলাতক বাবাকে হাজির করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও গুলশান থানার পুলিশকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। রোববার বিকেল ৩টার মধ্যে তাদেরকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছিল। সাদিকা সাঈদের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ  দেন।

গত ১৬ নভেম্বর ভারতীয় নাগরিক সাদিকা সাঈদের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের তিন বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশি নাগরিক বাবা শাহিনুর টি আই এম নবীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। শিশুকে নিয়ে বাবা শাহিনুর যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সেজন্য ইমিগ্রেশন পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।  

আর ১৫ নভেম্বর ওই শিশুকে ১৬ নভেম্বর সকালের মধ্যে মায়ের আইনজীবীর কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। কিন্তু ওই শিশুর বাবা আইনজীবীর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেননি। এ কারণে আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন।

গত ২৫ আগস্ট হাইকোর্ট দুই মাসের জন্য ওই শিশুকে তার মা সাদিকা সাঈদের হেফাজতে রাখার আদেশ দেন। আদেশে বলা হয়, মা ও শিশু মানবাধিকার সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (ফ্লাড) ব্যবস্থাপনায় থাকবে। তবে বাংলাদেশি বাবা সপ্তাহে তিনদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শিশুর সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। এ দুই মাস সাদিকা সাঈদের পাসপোর্ট গুলশান থানায় জমা রাখতে বলা হয়।

শিশুর মায়ের আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাইকোর্টের আদেশের পর শিশুর বাবা তার সন্তানকে উন্নত পরিবেশে গুলশান ক্লাবে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। শিশুর মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আমরাও রাজি হই। গুলশান ক্লাবেই মা ও শিশু অবস্থান করছিলেন। এক পর্যায়ে তিন বছরের ওই শিশুকে বেড়ানোর কথা বলে গুলশান ক্লাব থেকে নিয়ে যান বাবা শাহিনুর। কিন্তু পরে আর মায়ের কাছে দিয়ে যাননি। এর মধ্যে শিশুর মায়ের বিরুদ্ধে জিডি ও মামলা করেন শাহিনুর।

এ বিষয়ে গত ১৪ নভেম্বর হাইকোর্টের নজরে আনা হলে আদালত মঙ্গলবার সকালের মধ্যে শিশুকে আদালতে হাজির করতে বলেছিলেন। কিন্তু আদালতের আদেশ প্রতিপালন করা হয়নি।

আইনজীবীরা জানান, ভারতের বিয়ে সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে অন্ধপ্রদেশের হায়দরাবাদের সাদিকা সাঈদ শেখ নামে এক মেয়েকে বিয়ের জন্য পছন্দ করেন ঢাকার বারিধারার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান শাহিনুর টিআইএম নবী। মেয়েটি হায়দারাবাদের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান।

২০১৭ সালে হায়দারাবাদে তাদের ঘটা করে বিয়ে হয়। বিয়ের পর মালেশিয়ার কুয়ালালামপুরে বসবাস শুরু করেন তারা। কয়েক মাস পর ঢাকায় চলে আসেন। এর মধ্যে এই দম্পতির ঘরে ২০১৮ সালে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। এক পর্যায়ে তাদের সংসারে অশান্তি নেমে আসে। সাদিকা শেখকে মারধরও করেন তার স্বামী শাহিনুর। তাকে ভারতের আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেন।

বিষয়টি ভারতে মেয়েটির আত্মীয় স্বজনরা জানতে পারেন। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে প্রথমে ভারতীয় হাইকমিশনে যোগাযোগ করা হয়। তারপরও সমাধান হয়নি। পরে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

এমএইচডি/ওএফ