মিতু হত্যার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব অন্য সংস্থাকে দিতে আবেদন
মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের করা মামলার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিশেনের (পিবিআই) পরিবর্তে অন্য কোনো সংস্থাকে দেওয়ার আবেদন করেছেন বাবুলের আইনজীবী। একইসঙ্গে তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তনেরও আবেদন করা হয়েছে।
রোববার (১৪ নভেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমানের আদালতে আবেদন করেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করে ইফতেখার সাইমুল বলেন, আমরা তদন্তকারী সংস্থা ও তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের আবেদন করেছি। আদালত ১২ ডিসেম্বর এ আবেদনের ওপর শুনানির সময় নির্ধারণ করেছেন।
তিনি বলেন, যে সংস্থা বা যিনি একবার তদন্ত করে মিতু হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, সেই সংস্থাকে আবার অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব দেওয়ায় বাদীর পক্ষে আপত্তি জানিয়ে আবেদন করা হয়েছে। আমরা আদালতে বলছি সিআইডি বা র্যাবকে দিয়ে মামলাটি তদন্ত করার জন্য। এর আগে মামলার তদন্ত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। তাই অধিকতর তদন্তের জন্য ওই পদমর্যাদার কর্মকর্তা বা তারও ওপরের লেভেলের কর্মকর্তা দিয়ে মামলাটি তদন্তের অনুরোধ করছি।
এদিকে, অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন শুরুর জন্য মিতু হত্যা মামলার নথিপত্র আদালতের হেফাজত থেকে নিজের হেফাজতে নেওয়ার জন্য গত ১০ নভেম্বর আবেদন করেছিলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রাম মহানগরের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। রোববার আদালত এ আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, আদালত নথিপত্র সরবরাহের আদেশের বিষয়ে সোমবার বিস্তারিত বলতে পারব।
এ বিষয়ে বাবুল আক্তারের আইনজীবী ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের হেফাজতে থাকা নথিপত্র তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের আপত্তি আছে। কাল (সোমবার) আমরা লিখিতভাবে আবেদন করব। বর্তমান তদন্তকারী নথিপত্র চাইলেই তাকে এভাবে দেওয়া যাবে না। এগুলো এখন জুডিশিয়াল হেফাজতে রাখা হয়েছে। এগুলো প্রায় ৫৭০ পৃষ্ঠার। প্রতিটি পৃষ্ঠা ফটোকপি করে সাক্ষর করে এককপি আদালতে রাখতে হবে। বাকি কপি তদন্ত কর্মকর্তাকে দেওয়া যেতে পারে।
এদিকে, গত ১৪ অক্টোবর কারাবন্দি বাবুল আক্তার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দাখিল করেন। পরে আদালত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে টেকনিক্যাল ত্রুটি আছে উল্লেখ করে অধিকতর তদন্ত করে পুনরায় প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন। ১২ ডিসেম্বর চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত। এরপরই অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে না দেওয়ার আবেদন করেছেন বাবুল আক্তারের আইনজীবী।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরের নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। ওই সময় এ ঘটনা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচিত হয়। ঘটনার সময় মিতুর স্বামী পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার অবস্থান করছিলেন ঢাকায়। ঘটনার পর চট্টগ্রামে ফিরে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রীকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে মামলায় অভিযোগ করেন তিনি। তবে দিন যত গড়িয়েছে মামলার গতিপথও পাল্টেছে। এক পর্যায়ে সন্দেহের কেন্দ্রবিন্দুতে আসে স্বামী বাবুল আক্তারের নাম। তদন্তে তার বিরুদ্ধেই হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১১ মে ডেকে তাকে হেফাজতে নেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
পরে ১২ মে বাবুল আক্তারসহ আটজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। তারপর তাকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।
কেএম/এইচকে