ক্রিকেটার নাসিরের জামিন শুনানিতে যা বললেন আইনজীবী
তামিমা সুলতানা তাম্মিকে বিয়ে করায় ক্রিকেটার নাসির হোসেন মামলায় না পড়লে এখন জাতীয় দলের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে থাকতেন। দলের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারতেন।
রোববার (৩১ অক্টোবর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে জামিন শুনানিতে নাসিরের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ হিরু এ কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
জামিন শুনানিতে তিনি আরও বলেন, নাসির একজন জনপ্রিয় ক্রিকেটার। তিনি তামিমাকে বিয়ে করেছেন। তামিমা তালাক না দিয়ে নাসিরকে বিয়ে করেছেন বলে বাদী তার মামলার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, যা সঠিক নয়। মূলত আসামি তামিমা তালাক দিয়েছেন, যা কাজী অফিসে এন্ট্রি আছে। তালাকের নোটিশ পাঠানোর দায়িত্ব কাজীর। আর পোস্ট অফিস ডাক রশিদের কপি সংরক্ষণ করে কি করেনি তার দায় আসামিদের নয়।
তিনি আরও বলেন, আজ এ মামলায় না পড়লে এখন জাতীয় দলের সঙ্গে থাকতেন নাসির। দলের জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারতেন। আদালত আসামিদের হাজির হতে নোটিশ দিয়েছিলেন। আসামিরা নোটিশ অনুযায়ী স্বেচ্ছায় আদালতে এসেছেন। তাই তাদের জামিন দেওয়া হোক।
অপরদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী ইসরাত হাসান জামিনের বিরোধিতা করে শুনানিতে বলেন, মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারা থাকলেও জামিনের আবেদনে উল্লেখ করেন নাই। আইন অনুযায়ী নোটিশ সার্ভ করার দায়িত্ব কাজীর নয়, যিনি তালাক দেবেন তার ওপর বর্তায়। ডাক রশিদ জালিয়াতির মাধ্যমে তালাক দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যা তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, আসামিরা ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে তালাক দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু তদন্তে বাদী এবং আসামি তামিমা ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হোটেলে থেকেছেন মর্মে উঠে এসেছে। আসামিরা সরকারি তথ্য জাল-জালিয়াতি করে তালাক দেখানোর চেষ্টা করেছেন। তাই আসামিদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হোক।
উভয় পক্ষে শুনানি শেষে আদালত দশ হাজার টাকা মুচলেকায় ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মিসহ তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেছেন। জামিনপ্রাপ্ত অপর আসামি হলেন তামিমার মা সুমি আক্তার।
এর আগে, রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় তারা আদালতে হাজির হন। এরপরেই তাদের পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয়।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদন আমলে নিয়ে বিচারক তাদের আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ডিভোর্স পেপার ছাড়াই অন্যের স্ত্রীকে বিয়ে করার অভিযোগে ক্রিকেটার নাসির হোসেন ও তামিমা সুলতানা তাম্মির বিরুদ্ধে করা মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ জসীমের আদালতে তামিমার সাবেক স্বামী রাকিব হাসান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
রাকিবের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইশরাত জাহান ওই সময় বলেছিলেন, ২০১১ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি বাদীর (রাকিব হাসান) সঙ্গে ১ নম্বর আসামি তামিমা সুলতানার ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ৩ লাখ এক টাকা দেনমোহরে বিয়ে এবং রেজিস্ট্রি হয়। বিয়ের পর থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করতে থাকেন। তাদের তোবা হাসান নামে এক মেয়ে রয়েছে। যার বর্তমান বয়স ৮ বছর।
মামলা সূত্রে আরও জানা যায়, তামিমা পেশায় একজন কেবিন ক্রু। তিনি সৌদি এয়ারলাইন্সে কর্মরত রয়েছেন। চাকরির সুবাদে তিনি ২০২০ সালের ১০ মার্চ সৌদিতে গিয়েছিলেন। মহামারির কারণে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি হলে সেখানেই অবস্থান করেন। এ সময় ফোন এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাকিবের সঙ্গে তার যোগাযোগ হতো।
মামলায় বলা হয়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তামিমার সঙ্গে ২ নং আসামির (ক্রিকেটার নাসির) কথিত বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তা বাদীর নজরে আসে। বাদী এই ধরনের ছবি দেখে হতবাক হয়ে যান। পরবর্তীতে পত্রিকায় এই বিষয়ে সংবাদ দেখে তিনি ঘটনার বিষয় নিশ্চিত হন। এ ছাড়া তাদের গায়ে হলুদ ও বিয়ে পরবর্তী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান যথাক্রমে ১৭ ও ২০ ফেব্রুয়ারি সম্পন্ন হয়। যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।
মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, তামিমা বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকা অবস্থায় নাসিরের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। নাসির বাদীকে ফোন করে জানান যে সম্পূর্ণ বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত এবং তার নিকট তামিমা আছেন। বাদীর সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক চলমান থাকাবস্থায় তামিমার নাসিরকে বিয়ে করা যা ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় আইনে সম্পূর্ণ অবৈধ। আসামিদের এরূপ অনৈতিক ও অবৈধ সম্পর্কের কারণে বাদী ও তার শিশু কন্যা মারাত্মকভাবে মানসিক বিপর্যস্ত হয়েছেন।
টিএইচ/এইচকে