স্ত্রীকে দিলেন এক টুকরো জমি, চাকরি ফিরে পেলেন সেই স্বামী
স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দেওয়ায় স্বামীকে ফায়ারম্যানের চাকরি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগ আদেশে বলেছেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বামী ও স্ত্রী আদালতকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তারা সুখী দাম্পত্য জীবনযাপন করবেন। একইসঙ্গে কোর্টের নির্দেশমতো স্বামী স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দিয়েছেন। দুজনের সমঝোতার কারণে স্বামীর চাকরি ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।
স্বামীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, মামলা নিষ্পত্তির পর চাকরি ফিরে পেয়ে যদি আরেকটা বিয়ে করেন তাহলে চাকরি আর করতে পারবেন না।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দেওয়ার শর্তে স্বামীকে চাকরি ফেরত দেওয়ার কথা বলেছিলেন।
স্ত্রী নির্যাতনের দায়ে ফায়ারম্যানের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়াসহ কয়েক দফায় জেল খাটেন স্বামী। তবে ভবিষ্যতে আর স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না বলে স্বামী অঙ্গীকার করলে সর্বোচ্চ আদালত স্ত্রীকে আগে এক টুকরো জমি লিখে দিতে বলেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগে ফায়ারম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী। পরে রাজশাহীর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্বামীর সাজা হয় এবং তিনি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তবে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট স্বামীকে খালাস দেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। অন্যদিকে স্বামী মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘কম্প্রোমাইজ অ্যাপ্লিকেশন’ করেন। স্ত্রী আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে তাকে নির্যাতনের কথা বলেন। এসময় আদালত স্বামীকে বলেন, আপস মীমাংসার কথা বলছেন কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না তার কি গ্যারান্টি আছে? জবাবে স্বামী বলেন, আমি আর নির্যাতন করব না। তবে স্যার এক হাতে তো আর তালি বাজে না।
একপর্যায়ে আদালত স্ত্রীর কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার একটা সন্তান আছে, আমি চেয়েছিলাম আমার হাজবেন্ড কিছু না করুক কিন্তু আমার সঙ্গে ভালো আচরণ করুক। কিন্তু সে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করত। এখন সে যেহেতু বলেছে এবারের মতো মাফ করতে, আর ওই রকম আচরণ করবে না। তাই সন্তানটার চিন্তাটা করে এ (আপস) সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি।’
এসময় আদালত ওই স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন যে, ‘এই মামলা যদি খারিজ বা নিষ্পত্তি হয়ে যায়। তারপর যদি তার স্বামী দুর্ব্যবহার করে তখন কি করবেন?’ জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটা হলে তো নসিব, এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। আমি আমার ছেলের বাবাকে ধরে থাকতে চাই বাঁচা অব্দি।’
এরপর আদালত ওই স্বামীকে বলেন, আপনার স্ত্রী যেহেতু শিক্ষিত এবং আইনে পড়া, তাই উনি যদি চাকরি করতে চায় বা ওকালতি করতে চায় তা করতে দেবেন তো? ‘জ্বি, দেব’ আদালতকে বলেন স্বামী। এসময় আদালত বলেন, ‘ওনাকে (স্ত্রীকে) দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই সংসারটা টিকুক। দুজনে দুজনের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবেন। একজন আদালতে বলছেন এক হাতে তালি বাজে না। আমরা চাই আগামীতে যেন কোনো হাতেই আর তালি না বাজে।’
ওইদিন সর্বোচ্চ আদালত স্বামীকে বলেন, আপনি একটু জায়গা আপনার স্ত্রীর নামে লিখে দিয়ে আসেন। এক মাসের মধ্যে এটা দিয়ে আসলে আমরা আপনারা চাকরি ফিরিয়ে দিতে বলে দেব।
আজকে আপিল বিভাগে শুনানিতে স্বামী তার স্ত্রীকে এক টুকরো জমি লিখে দেওয়ার কথা জানান। তখন আদালত এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ স্বামীর পক্ষে শুনানি ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কে বি রুমী। স্ত্রীর পক্ষে ছিলেন- অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড শিরিন আফরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
এমএইচডি/এসএসএইচ