এক ধাপ পার হলেই তাবেলা সিজার হত্যার রায়
রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের বিচার ছয় বছরেও শেষ হয়নি। সাক্ষীদের হাজির না হওয়া এবং করোনায় আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বিচার শেষ করা যায়নি— এমন দাবি রাষ্ট্রপক্ষের। তবে, চলতি বছর অর্থাৎ বিচার প্রক্রিয়ার আর একটি ধাপ শেষ হলেই আলোচিত এ হত্যা মামলার কাঙ্ক্ষিত রায় পাওয়া যাবে, আশা তাদের।
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান- ২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও,বিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার। ওই ঘটনার এক দিন পর তার সহযোগী আইসিসিও’র কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ হেলেন ভেন ডার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলাটি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে আছে।
২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশান- ২ এর ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন নেদারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও,বিডির কর্মকর্তা তাবেলা সিজার
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘তাবেলা সিজার হত্যা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক জেহাদ হোসেনের সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলেই যুক্তিতর্কের ধাপ। এরপরই রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবেন আদালত।’
রায়ে আসামিদের ‘সর্বোচ্চ সাজা’ নিশ্চিত হবে— এমন প্রত্যাশা করেন তাপস কুমার পাল। মামলাটির বিচার কার্যক্রমে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক আগেই মামলার রায় ঘোষণা করা যেত। গত দেড় বছর করোনা মহামারির কারণে আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সাক্ষীরাও আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আমরা আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যেই আদালত আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণা করতে পারবেন।’
২০১৬ সালের ২২ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী সাতজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। তারা হলেন- বিএনপির নেতা এম এ কাইয়ুম (কাইয়ুম কমিশনার), তার ভাই আবদুল মতিন, তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শুটার রুবেল, রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল, শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও মো. সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেল।
আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙারি সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে আবদুল মতিন ছাড়া বাকি সবাই ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
আসামিদের মধ্যে কাইয়ুম কমিশনার ও ভাঙারি সোহেল এখনও পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার পাঁচজনের মধ্যে আবদুল মতিন ছাড়া বাকি সবাই ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘আসামি সোহেলের কাছ থেকে পিস্তল ভাড়া নিয়ে খুনিরা তাবেলা সিজারকে হত্যা করেন। মতিনের নির্দেশে ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউসের সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার স্থানে তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।’
সেখানে আরও বলা হয়, হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা। একই সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা ছিল আসামিদের।
২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর সাত আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগপত্রটি আমলে নেন আদালত। এখন পর্যন্ত মোট ৪০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৪ অক্টোবর দিন ধার্য রয়েছে।
মামলার বিষয়ে আসামি আবদুল মতিনের আইনজীবী নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আসামি মতিনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ওই হত্যাকাণ্ডের পর মতিন দীর্ঘদিন নিখোঁজ ছিলেন। সেজন্য তার পরিবার থেকে একটি জিডিও করা হয়। নিখোঁজের পর তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার কোনো সাক্ষী মতিনের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেননি। আমরা আশা করছি এ মামলা থেকে তাকে খালাস দেবেন আদালত।
টিএইচ/এমএআর