পরীমণির রিমান্ড : দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট
চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানো নিম্ন আদালতের দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, লিখিত ব্যাখ্যায় তারা হাইকোর্টকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমরা এ ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নই। বিচারকদের ব্যাখ্যায় হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন (হেয়) করা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন আদালত।
বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
আদালত এই মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর (বুধবার) দিন ধার্য করেছেন। ওইদিন পরীমণির মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আবারও আদালতে হাজির হতে হবে।
আদালতে পরীমণির পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মিজানুর রহমান।
শুনানির শুরুতে হাইকোর্ট বলেন, দুই বিচারক কী ব্যাখ্যা দিয়েছে তা একটু শোনাতে চাই। রাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। অত্র মামলার আসামি সামসুন নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণি বিদেশি মদ, এলএসডি আইসসহ গ্রেফতার হন। এসময় আদালত জানতে চান এলএসডি বিদেশি মাদক রাখার সাজা কত বছরের? তখন আইনজীবীরা বলেন, ৫ বছর।
হাইকোর্ট বলেন, তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্টের গাইড লাইন এবং আমাদের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে সে। তাদের জবাবে আমরা সন্তুষ্ট নই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডের বিষয়ে তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। এ কারণে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর রাখলাম। তদন্ত কর্মকর্তা সিডি (মামলার নথি) দাখিল করেছে। সেটি আমরা গ্রহণ করেছি।
হাইকোর্ট বলেন, বিচারকরা ব্যাখ্যায় বলছে উপরোক্ত বিষয়ে সার্বিক বিবেচনায় আমি দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করি। অত্র আদেশের ক্ষেত্রে কোনো রূপ ত্রুটি-বিচ্যুতি নিতান্তই আমার অনিচ্ছাকৃত এবং সরল বিশ্বাসে কৃত ভুল।
আদালত বলেন, ওনাদের (বিচারকদের) ত্রুটি হয়েছে এটা বিশ্বাস করেন না। তার মানে হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন (হেয়) করা হয়েছে।
চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ডে পাঠানো দুই বিচারক দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলাম আদালতের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর চিত্রনায়িকা পরীমণিকে দফায় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। পরিমণির মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। এছাড়া পরীমণির বিরুদ্ধে বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলার সব নথি ও মামলার কেস ডকেটও তলব করা হয়েছে।
বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওইদিন এ আদেশ দেন।আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও সৈয়দা নাসরিন।
গত ২৯ আগস্ট উচ্চ আদালতের রায় না মেনে মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণিকে বারবার নেওয়া রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়। আবেদনে পরীমণিকে রিমান্ডে নেওয়ার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের রায় না মানার অভিযোগ আনা হয়।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে অ্যাডভোকেট সৈয়দা নাসরিন এ আবেদন দায়ের করেন।
গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় পরীমণির তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত পরীমণির একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে পরীমণিকে প্রথম দফায় চার দিন ও দ্বিতীয় দফায় দুদিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিআইডি।
গত ৪ আগস্ট পরীমণিকে গ্রেফতার করে র্যাব। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন র্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান।
এদিকে গত ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট পরীমণিকে জামিন না দিয়ে তার আবেদন শুনানি প্রশ্নে রুল জারি করেন। রুলে রাজধানীর বনানী থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমণির জামিন আবেদন আদেশ পাওয়ার দুই দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এছাড়া পরীমণির জামিন আবেদন শুনানির জন্য ১৩ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করে নিম্ন আদালতের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তাও জানতে চাওয়া হয়। হাইকোর্টের আদেশের আলোকে গত ৩১ আগস্ট পরীমণিকে জামিন দেন বিচারিক আদালত।
এমএইচডি/জেডএস