পার্থ গোপাল বণিকের জামিন : বিচারকের আচরণ অপ্রত্যাশিত-লজ্জাজনক
বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিকের জামিন বাতিলের রায়ে তাকে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়া বিচারক প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেছেন, জেলা জজ পর্যায়ের একজন বিচারকের এ ধরনের আচরণ ও কাজ অপ্রত্যাশিত-লজ্জাজনক। তাকে জামিন দেওয়া আদালত অবমাননার সামিল।
বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ ১২ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেছেন।
বিজ্ঞাপন
গত ২ সেপ্টেম্বর ৮০ লাখ টাকাসহ হাতে নাতে গ্রেফতার বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে নিম্ন আদালতের দেওয়া জামিন বাতিল করেন হাইকোর্ট। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে তার মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একইসঙ্গে পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টের জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
গত ১৯ আগস্ট বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে ক্ষমা প্রার্থনা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন।
হাইকোর্টে দাখিল করা ব্যাখ্যায় তিনি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করে বরখাস্ত হওয়া ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বণিককে জামিন দেওয়ায় ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। সেই সঙ্গে অব্যাহতি দিতেও আবেদন করেছেন ওই বিচারক। হাইকোর্টের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে লিখিত ব্যাখ্যা দেন বিচারক ইকবাল হোসেন।
ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, ফৌজদারি আপিল নং (১০৫৩৪/১৯) মামলায় গতবছরের ২ নভেম্বর হাইকোর্ট এক আদেশে পার্থ গোপাল বণিকের মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্নের জন্য জজ ইকবাল হোসেনকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এ আদেশ যথাসময়ে না পৌঁছায় ছয় মাসের সময়সীমা অতিক্রম হয়েছে বলে আসামির আইনজীবী বিশেষ আদালতকে জানায়। এছাড়া ফৌজদারি রিভিশন মামলা নং (১৪৫/২১) মামলায় গত ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্ট অপর এক আদেশে মামলাটির বিচার এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করতে বলা হয়। গত ১০ মার্চ এ আদেশের অনুলিপি পান। এ আদেশে উল্লিখিত সময়সীমার মেয়াদ এখনও রয়েছে। বিশেষ আদালতের বিচারক ইকবাল হোসেন ব্যাখ্যায় বলেছেন, তিনি হাইকোর্টের আদেশ প্রতিপালনে সদা সচেষ্ট রয়েছেন।
গত ২৮ জুন নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার শেষ না করে পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার ঘটনায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫–এর বিচারক ইকবাল হোসেনের কাছে ব্যাখ্যা চান হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার বিষয়ে চ্যানেল ২৪ এ প্রচারিত প্রতিবেদনের ভিডিও ক্লিপ আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এছাড়া পার্থ গোপাল বণিকের জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন শুনানির জন্য গ্রহণ করেন আদালত।
পার্থ গোপাল বণিককে অস্বাভাবিকভাবে জামিন দেওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। এছাড়া তার জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।
গত ১৯ জুন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় পার্থ গোপাল বণিক জামিন পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫–এর বিচারক ইকবাল হোসেন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় তাকে জামিন দেন। পরদিনই তিনি জেল থেকে বের হন। অনেকটা গোপনে ও তড়িঘড়ি করে এ জামিন দেওয়া হয় ও তিনি কারামুক্ত হন।
এ মামলায় গতবছরের ৪ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। সেই টাকা নিজ বাসার ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। অভিযান পরিচালনা করে তার বাসা থেকে ওই টাকা জব্দ করা হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি পার্থ গোপাল বণিক গতবছরের ২৮ জুলাই দুদকে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে বক্তব্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পার্থ গোপাল বণিক জানান, তার বাসায় ৩০ লাখ টাকা নগদ আছে। এ টাকার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। পরে অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এ মামলায় হাইকোর্টে একাধিকার জামিন আবেদন করেও তিনি জামিন পাননি।
এমএইচডি/এসএসএইচ