চিত্রনায়ক সালমান শাহ মারা যাওয়ার ২৫ বছর আজ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এই দিনে মারা যান ’কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির এ নায়ক। তার মৃত্যুর বিষয়ে দায়ের করা মামলায় একাধিক তদন্ত সংস্থা তাদের চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। তবে এসব চূড়ান্ত প্রতিবেদন মেনে নিতে পারেনি তার পরিবার ও ভক্তরা।

এদিকে আদালতের প্রতিটি ধার্য তারিখে আদালতের সামনে সালমান শাহ হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে ভক্ত-অনুরাগীরা।

সর্বশেষ গত বছরের (২০২০ সাল) ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালতে ৬০০ পৃষ্ঠার একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, চিত্রনায়ক সালমান শাহ পারিবারিক কলহের জের ধরে আত্মহত্যা করেন।

সর্বশেষ গত ৩১ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদের আদালতে মামলাটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু সালমান শাহর মা লন্ডনে থাকায় নারাজি দাখিলে সময়ের আবেদন করেন তার আইনজীবী ফারুক আহমেদ। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে শুনানির জন্য আগামী ৩১ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান চিত্রনায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার (ইমন) ওরফে সালমান শাহ। সে সময় এ বিষয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছিলেন তার বাবা প্রয়াত কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী।

পরে ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তর করার আবেদন জানান তিনি। অপমৃত্যু মামলার সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিষয়টি একসঙ্গে তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ৩ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় সিআইডি। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়। ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন গৃহীত হয়। সিআইডির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে তার বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী রিভিশন মামলা দায়ের করেন। ২০০৩ সালের ১৯ মে মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠায় আদালত। এরপর প্রায় ১৫ বছর মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে ছিল।

২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ঢাকার সিএমএম আদালতের বিচারক বিকাশ কুমার সাহার কাছে বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদন দাখিল করেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক। এ প্রতিবেদনে সালমান শাহের মৃত্যুকে অপমৃত্যু হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২০১৪ সালের ২১ ডিসেম্বর সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী ছেলের মৃত্যুতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান এবং ওই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেবেন বলে আবেদন করেন।

২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি নীলা চৌধুরী ঢাকা মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর হোসেনের আদালতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে নারাজির আবেদন দাখিল করেন। নারাজি আবেদনে উল্লেখ করা হয়, আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জন তার ছেলে সালমান শাহের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন।

মামলাটি এরপর র‌্যাব তদন্ত করে। তবে র‌্যাবের মাধ্যমে তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ মহানগর দায়রা জজ আদালতে একটি রিভিশন মামলা করে। ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ ৬-এর বিচারক ইমরুল কায়েশ রাষ্ট্রপক্ষের রিভিশনটি মঞ্জুর করেন এবং র‌্যাবকে মামলাটি আর তদন্ত না করার আদেশ দেন। এরপর থেকে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বে আছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

টিএইচ/এসএম