গর্ভবতীদের টিকা : ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে বললেন হাইকোর্ট
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা প্রদানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকা প্রদান করা যাবে কি না, এ বিষয়ে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা ও নীতিমালা করতে বলেছেন আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেলকে আদালতের এই আদেশের বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানাতে বলা হয়েছে। সোমবার (২ আগস্ট) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
এর আগে ৩১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের চারজন আইনজীবী অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট দায়ের করেন। চার আইনজীবী হলেন- ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার, অ্যাডভোকেট রাশিদা চৌধুরী ও ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক।
রিটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং আইইডিসিআরের পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।
গত ২৯ জুলাই অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদানের জন্য সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়। মানবাধিকার সংগঠন ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এই নোটিশ পাঠান।
নোটিশে বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ নারী অন্তঃসত্ত্বা হন। অর্থাৎ ৩৫ লাখ অন্তঃসত্ত্বা নারী আরও ৩৫ লাখ মানুষের অস্তিত্ব বহন করেন। কিন্তু করোনা মহামারিতে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং শিশু মারা যাচ্ছে। সঠিকভাবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের করোনার টিকা ব্যবস্থা করা গেলে মৃত্যু সংখ্যা আরও কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া তথ্য মতে, অন্তঃসত্ত্বাদের করোনা টিকা দেওয়া যাবে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্তঃসত্ত্বাদের ফাইজার এবং মডার্নার টিকা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ওইসব দেশের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা করোনার টিকা নিয়ে আসছেন। তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। গবেষণা অনুযায়ী অন্তঃসত্ত্বা নারীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। কোনো কারণে আক্রান্ত হলে তাদের এবং শিশুর জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে।
নোটিশে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, সরকারের নির্ধারিত করোনা টিকা রেজিস্ট্রেশনের সুরক্ষা অ্যাপে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধনের জন্য অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ তাদের চেয়েও কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনা টিকা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা একটি নিপীড়নমূলক, বৈষম্যমূলক এবং তাদের জীবনধারণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদানের জন্য সুরক্ষা অ্যাপে সুযোগ করে দেওয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব। নোটিশের জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করা হয়েছে।
এমএইচডি/এমএইচএস