বাইক রাইডিং শুরু করেছেন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা

মহামারি করোনা মানুষের জীবনের অনেক হিসাবই পাল্টে দিয়েছে। করোনার কারণে হাজারো মানুষ কর্মহীন হয়ে রাজধানী ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন গ্রামে। আবার অনেকে টিকে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন। রাজধানীতে টিকে থাকার লড়াই করা তেমনই একজন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা। 

এক সময় অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের একজন ব্যস্ত আইনজীবী। সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেছেন। খালেদা জিয়াসহ বিএনপির বিভিন্ন নেতার জামিন আবেদনে তিনি ফাইলিং আইনজীবী হয়ে কাজ করেছেন।

করোনার আগে অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা বিভিন্ন মামলা নিয়ে হাইকোর্টের এক বেঞ্চ থেকে আরেক বেঞ্চে ছুটে যেতেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলার কাজেই ব্যস্ত থাকতেন। বেশ সচ্ছলভাবেই জীবনযাপন করতেন তিনি। কিন্তু করোনায় পাল্টে গেছে তার জীবনের চিত্র।

প্রায় দেড় বছর ধরে উচ্চ আদালতের (হাইকোর্ট) স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ। ভার্চুয়াল আদালত চলছে, যেখানে শুধু অতি জরুরি বিষয়ে শুনানি চলে। তাছাড়া লকডাউনের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে আদালত। এসব কারণে অনেক আগেই অ্যাডভোকেট মাসুদ রানার উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। কবে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালু হবে, তারও ঠিক নেই। সংসার চালাতে তাই বাধ্য হয়ে বাইক রাইডারের কাজ বেছে নিয়েছেন তিনি।

শুক্রবার (১৬ জুলাই) বাইক রাইডিংয়ের একটি ছবি শেয়ার করে এডভোকেট মাসুদ রানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন একটি পোস্ট দিয়েছেন। ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতি, আপনার কোর্ট অফিসার এখন বাইক রাইডার’ এ শিরোনামে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন, আইনপেশা লকডাউনে সম্পূর্ণ বন্ধ। লকডাউন ব্যতীত সময়ে সীমিত পরিসরে ভার্চুয়াল কোর্ট ছিল। কিন্তু এখন লকডাউন স্থগিত হলেও কোর্ট বন্ধ। সব পেশার মানুষ কাজ করতে পারছেন, শুধু আইনজীবীরাই কর্মহীন। 

 অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের সঙ্গে মো. মাসুদ রানা

তিনি আরও লিখেছেন, দীর্ঘ এক বছর চারমাস উপার্জনহীন থাকলেও বাড়িভাড়া, চেম্বার ভাড়া, বার কাউন্সিল, বার অ্যাসোসিয়েশনসহ জীবন-যাপন ব্যয় থেমে নেই। কোর্ট অফিসারদের (আইনজীবী) চরম দুর্দিন চলছে। আইনজীবীদের চিফ অথোরিটি মাননীয় প্রধান বিচারপতি, কিন্তু তাকে কিছু বলা যাবে না। আদালত অবমাননার অভিযোগে সনদ চলে যায়। অনেকেই আপদকালীন ভিন্ন পেশা গ্রহণ করলেও সংখ্যাগরিষ্ঠরা কোর্ট খোলার আশায় আছেন। কিন্তু আমি অতি সাধারণ, তাই এত কিছু না ভেবে কর্ম এবং উপার্জনের লক্ষ্যে আপদকালীন এ বাইক রাইডিং পেশা শুরু করলাম। সবার নিকট দোয়া চাই। সবাই ভাল থাকবেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘কী আর বলব! জমানো যা টাকা ছিল, তা ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বাসা ভাড়া বাকি পড়তে শুরু করেছে। মানুষের কাছে তো আর হাত পাততে পারি না। গত কয়েক দিন ধরে বাইক রাইডিংয়ের কাজ শুরু করেছি। কোন কাজকেই ছোট করে দেখি না। আমার জন্য দোয়া করবেন।’

এমএইচডি/আরএইচ