অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে ফাঁসির আসামির লেখা চিঠি

স্ত্রী হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে ১৪ বছর ধরে কারাগারে থাকা স্বপন কুমার বিশ্বাস দেশের প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে চিঠি লিখেছিলেন। চিঠিতে তাকে ফাঁসির দণ্ড থেকে বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছিলেন।

কনডেম সেল থেকে দেওয়া চিঠিতে স্বপন কুমার বিশ্বাস লিখেছিলেন, ‘কীভাবে বেঁচে আছি তা লিখে বোঝাতে পারব না। এটাকে ঠিক বেঁচে থাকা বা জীবন বলে না। এই জীবন আর সত্যিই আমার সহ্য হচ্ছে না। আপনি মহানুভব, তাই দয়া করে আমাকে আপনার নিজ সন্তান মনে করে আমার জীবনটাকে বাঁচান। আমি বাঁচতে চাই। আপনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি। ভালো থাকবেন।’

এই চিঠি পাওয়ার পর জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন স্বপন কুমার বিশ্বাসের পক্ষে বিনা ফিতে মামলা পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেন। প্রধান বিচারপতিকেও এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। 

গত ৮ জুলাই শুনানিতে প্রখ্যাত ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে পূর্বপরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়নি। পারিবারিক ঝগড়ার এক পর্যায়ে উত্তেজিত অবস্থায় এ ঘটনা  ঘটেছে। এ কারণে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাসকে মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন দণ্ড কোনটাই দেওয়া সমীচীন হবে না। এ মামলায় প্যানেল কোডের ৩০৪/২ ধারা অনুযায়ী আসামির সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছরের বেশি হতে পারে না।

এ মামলায় অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকে সহযোগিতা করেন তার জুনিয়র নবীন ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।

আজ সোমবার (১২ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের  নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ স্বপন কুমার বিশ্বাসের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। একইসঙ্গে এই আসামিকে কনডেম সেল থেকে সাধারণ সেলে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। 

আদালতে বিনা ফিতে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাসের পক্ষে মামলা পরিচালনা করায় জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে বিশেষ ধন্যবাদ জানান আপিল বিভাগ। পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিনা ফিতে তিনি মামলা পরিচালনা করেছেন উল্লেখ থাকবে বলে আপিল বিভাগ জানান।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০০৬ সালের ১৬ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থানার নয়াটোল গ্রামে প্রথম স্ত্রী স্বপ্না ঘোষকে (৩৫) হত্যা করেন তার স্বামী স্বপন কুমার বিশ্বাস। স্বপ্নাকে না জানিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করার ঘটনায় ঝগড়ার এক পর্যায়ে স্ত্রীকে মাথায় আঘাত করে ‍খুন করা হয়। পরে তার গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়। একই বছরের ২৮ অক্টোবর সৈয়দ থানার পুলিশের এসআই শফিউল হক স্বপন কুমার বিশ্বাসের নামে মামলা করেন। ওইদিনই তাকে গ্রেফতার করা হয়।

১৩ জনের সাক্ষী গ্রহণ করে ২০০৮ সালের ১৮ নভেম্বর নীলফামারীর দায়রা জজ আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।

২০১৪ সালের ৯ এপ্রিল বিচারপতি সাহিদুল ইসলাম ও বিচারপতি আব্দুর রবের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। এর বিরুদ্ধে আসামি স্বপন কুমার বিশ্বাস আপিল করেন। 

এমএইচডি/এইচকে