অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্রাংশ অক্সিজেট উৎপাদন করতে বুয়েটের অনুমতি না পাওয়া সংক্রান্ত বিষয় হাইকোর্টের নজরে আসার পরের দিনই সাড়া দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর। 

মঙ্গলবার (৬ জুলাই) ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নাঈম গোলদার স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট 'অক্সিজেট' নামীয় অক্সিজেনের কনসেনট্রেশন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এরূপ সিপ্যাপ (Continuous positive air way pressure) মেডিকেল ডিভাইস উদ্ভাবন করেছে।

বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ মর্মে সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে যে, বুয়েট উদ্ভাবিত 'অক্সিজেট' নামীয় মেডিকেল ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমতি মিলছে না বলে বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হয়েছে।

মূলত, বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের 'অক্সিজেট' নামীয় মেডিকেল ডিভাইসটির পারফরমেন্স ট্রায়াল অনুমোদনের জন্য অদ্যবধি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে কোনো আবেদন দাখিল করা হয়নি।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেহেতু 'অক্সিজেট' নামীয় মেডিকেল ডিভাইসটি মানবদেহে চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে এ কারণে মেডিকেল ডিভাইসটির ক্লিনিক্যাল পারফরমেন্স ট্রায়াল প্রটোকল অনুমোদনের নিমিত্তে বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ (বিএমআরসি) এর এথিক্যাল ক্লিয়ারেন্সসহ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক আবেদন দাখিল করা প্রয়োজন। সন্তোষজনক পারফরমেন্স ট্রায়াল রিপোর্ট প্রাপ্তি এবং মেডিক্যাল ডিভাইসটি ISO:13485 কমপ্লায়েন্স কারখানায় উৎপাদন ও যথাযথ মাননিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত স্বাপেক্ষে বাজারজাত করার জন্য রেজিস্ট্রেশন প্রদান করা হবে। জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তার জন্য রেজিস্ট্রেশনের পাথওয়ে অনুসরণ করা হয়। 

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর এ ধরনের দেশীয় উদ্ভাবনকে সর্বদা অনুপ্রেরণা প্রদান ও সহযোগিতা করে থাকে।  

গত ১২ জুন বুয়েটের বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এর সহকারী অধ্যাপক ড. তৌফিক হাসান ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরকে তাদের উদ্ভাবিত 'অক্সিজেট' নামীয় মেডিকেল ডিভাইসটির বিষয়ে মৌখিকভাবে অবহিত করে। এরপর ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক ডিভাইসটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের জন্য দেশের মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জেএমআই, এএনসি গেট ওয়েল ইনসেন্টা মেডিকেল ডিভাইস এর শীর্ষ পর্যায়ের টেকনিক্যাল কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় এবং বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের সম্ভাব্য পথকে সুগম করে দেওয়া হয় এবং তাকে ক্লিনিক্যাল পারফরমেন্স ট্রায়াল প্রটোকল অনুমোদন গ্রহণের নিমিত্তে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে আবেদন করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হয়। এখন পর্যন্ত তার আবেদন পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের পক্ষ থেকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল ৫ জুলাই অক্সিজেন সরবরাহ যন্ত্রাংশ অক্সিজেট উৎপাদনের জন্য অনুমতি পেতে প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনার পরামর্শ দেন হাইকোর্ট। আদালত বুয়েটের বায়োমেডিক্যাল বিভাগকে এ সংক্রান্ত লিখিত আবেদন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে দিতে বলেন। একইসঙ্গে ওই আবেদন অ্যাটর্নি জেনারেল ও আদালতেও দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আদালতের নজরে আনলে হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এই আদেশ দেন।

হাইকোর্টের নজরে আনা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনিক আর হক জানান, করোনা আক্রান্ত রোগীদের কম সময়ে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করার জন্য অক্সিজেট নামে একটি ডিভাইস আবিষ্কার করে। ওই ডিভাইস দিয়ে ৩০ শতাংশ কম অক্সিজেন ব্যবহার করে মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করা সম্ভব। কিন্তু ডিভাইসটি কোনো কারখানা বা প্রতিষ্ঠানের না হওয়ায় উৎপাদন করার অনুমতি দেয়নি ওষুধ প্রশাসন। এ বিষয়টি আমি আদালতের নজরে এনেছিলাম।  

এমএইচডি/জেডএস