আনুশকা হত্যা : মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ২৬ জানুয়ারি
• দায় স্বীকার করে দিহানের জবানবন্দি
• উত্তেজক ট্যাবলেট ও অন্যের ইন্ধনের খোঁজে পুলিশ
• ধর্ষণ করা হয়েছে, অভিযোগ আনুশকার বাবার
• পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্মতির ভিত্তিতে মেলামেশা, দাবি দিহানের
• মামলা হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে
মাস্টারমাইন্ড স্কুলের ‘ও’ লেভেলের শিক্ষার্থী আনুশকা নূর আমিনকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আগামী ২৬ জানুয়ারি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) মামলার এজাহার গ্রহণ করে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ এ আদেশ দেন।
আদালতে কলাবাগান থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কলাবাগানে ডলফিন রোডে ঘটনাটি ঘটে। রাতে কলাবাগান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আনুশকার বাবা মো. আল আমিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলা নং-৬।
এদিকে, এ ঘটনায় গ্রেপ্তার ইফতেখার ফারদিন দিহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ জবানবন্দি গ্রহণ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশিদ। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
মামলার এজাহারে মো. আল আমিন অভিযোগ করেন, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী কর্মস্থলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বেলা সাড়ে ১১টায় আনুশকা কোচিংয়ের পেপার আনতে বাইরে যাচ্ছে বলে ফোনে তার মাকে জানায়। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে আনুশকা বাসা থেকে বের হয়ে যায়।
এজাহারে বলা হয়, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে দিহান আনুশকার মাকে ফোন দেয়। সে জানায়, আনুশকা তার বাসায় গিয়েছিল। সেখানে হঠাৎ অচেতন হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করায়। এ কথা শুনে আনুশকার মা ১টা ৫২ মিনিটে হাসপাতালে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে তিনি কর্তব্যরত চিকিৎসকের কাছে জানতে পারেন আনুশকাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
আনুশকার বাবা এজাহারে আরও বলেন, তারা বিভিন্নভাবে জানতে পেরেছেন, দিহান তার মেয়েকে প্রেমে প্রলুব্ধ করে ধর্ষণের উদ্দেশে বেলা ১২টার দিকে বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। পরে দিহান ফাঁকা বাসায় তার মেয়েকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়ে আনুশকা অচেতন হয়ে পড়ে। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে দিহান আনুশকাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার মেয়েকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মামলায় দিহানকে আসামি করা হয়েছে। আগেই আটক করা দিহানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এ ঘটনায় আটক বাকি তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা পেলে পুলিশ বাকি তিনজনকেও গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
মামলার তদন্তের বিষয়ে দুপুরে রাজধানীর ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন কার্যালয়ে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আনুশকা দিহানের বাসায় গিয়েছিলেন। দিহানের বাসা কলাবাগানে। এখানে আসার পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।
অভিযুক্ত দিহানের ভাষ্যমতে, আনুশকাকে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করার আগেই মৃত বলে ঘোষণা করে।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে গিয়ে আমরা লাশ উদ্ধারসহ দিহান নামের ওই ছেলেকে আটক করি। তাকে হেফাজতে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একপর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন, তাদের পারস্পরিক সম্পর্ক ও সম্মতির ভিত্তিতে মেলামেশা হয়। এরপর ওভার ব্লিডিং হয়, এ কারণে আনুশকা সেন্সলেস (অজ্ঞান) হয়। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, মূলত এটুকুই। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ভিত্তিতে তাদের দৈহিক মেলামেশার বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষ। এর বাইরে অন্য কোনো কেমিক্যাল বা ট্যাবলেট জাতীয় কিছু ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, সেটি পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনাকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্যখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদেরকে বিনীত অনুরোধ করতে চাই, তার পরিবার বুঝে-শুনে মামলা করেছে। এরপরেও এর সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
টিএইচ/এফআর