পার্থ গোপাল বনিক ও ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন

৮০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেফতার বরখাস্তকৃত ডিআইজি প্রিজন্স পার্থ গোপাল বনিককে অনেকটা গোপনে জামিন দেওয়ার ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টকে পাশ কাটিয়ে পার্থ গোপাল বনিককে জামিন দেওয়ায় সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে হচ্ছে।

সোমবার (২১ জুন) ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে ফেসবুক লাইভে তিনি এসব কথা বলেন। 

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, ‘আমি দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে। এই বিল্ডিংয়ে একটা জিনিস দেখাতে আমি হাইকোর্ট থেকে এখানে এসেছি। বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় একটা কোর্ট আছে, বিশেষ জজ আদালত-৫। একটি টিভি চ্যানেলের নিউজ দেখে বিশেষ জজ আদালত-৫ দেখার জন্য চলে এসেছি। যদি সব কাজ জজ কোর্টে হয়, তাহলে হাইকোর্টে যাওয়ার দরকার কী? আমি নিজেও চিন্তা করছি হাইকোর্ট ছেড়ে দিয়ে জজ কোর্টে প্র্যাকটিস করা যায় কি না।’

‘কারণ হাইকোর্টে একজন ব্যক্তির জামিন আবেদন তিন বার রিজেক্ট করা হলো। তিনি হলেন, সাবেক ডিআইজি প্রিজন পার্থ গোপাল বনিক। তিনি তার বাসায় ৮০ লাখ টাকা নিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। তার নামে ২০১৯ সালের জুলাই মামলা দেওয়া হয়। উনি একাধিকবার হাইকোর্টে জামিন চাইতে যান। হাইকোর্ট তাকে জামিন না দিয়ে ৬ মাসের মধ্যে মামলা শেষ করার নির্দেশ দেন। কোনো আসামি জজ সাহেব জামিন দিলে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয় না। কিন্তু কথা হচ্ছে, হাইকোর্ট যদি কোনো আসামিকে জামিন না দেয়, তাহলে প্রথা ভেঙে নিম্ন আদালত কখনও জামিন দেয় না। যদি না বিশেষ আগ্রহ থাকে। আমার কথা হলো, দুর্নীতিতে এমনি তো দেশের ১২টা বেজে গেছে। এর মধ্যে ডিআইজি প্রিজনের মতো একজন লোক (এভাবে জামিন পান)- যার ঘরে ৮০ লাখ টাকা পাওয়া গেছে, এর বাইরে যে কত টাকা পাওয়া গেছে (কে জানে)। (তিনি) জেলে যে সে কী পরিমাণ দুর্নীতি করেছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।’

সুমন বলেন, ‘এরকম একজন দুর্নীতিবাজ অফিসারকে যদি নিম্ন আদালতের জজ সাহেব জামিন দিয়ে দেন, এতে মানুষ হতাশ হয়ে যাবে। মানুষ ভাববে হাইকোর্টে যাওয়ার দরকার কী? জজ কোর্টেই সব হয়। এতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয় তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এ বিষয়ে কেউ কথা বলতে চায় না। আমি চ্যানেল ২৪ টোয়েন্টি ফোরকে ধন্যবাদ জানাই এরকম একটি রিপোর্ট করার জন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি আজ পার্থ গোপাল বনিককে জামিন দেওয়া সেই বিচারক সাহেবকে দেখতে এসেছিলাম। উনি কি এত শক্তিশালী যে, হাইকোর্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জামিন দিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে জামিনের আদেশ নিয়ে শুক্রবার সকালেই জেল থেকে বের হয়ে গেলেন (পার্থ গোপাল)। আমি উনার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ তুলছি না। শুধু একটা কথা বলতে চাই, বাংলাদেশ জন্মের পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। এই চোরের খনির কারণেই দেশের আজ বারোটা বেজে যাচ্ছে। সবাই ন্যায় বিচারের কথা বলেন, আপনি দুদককে দোষ দিয়ে কী করবেন? যদি এইখানে জামিন হয়ে যায়, রাতের আধারে যদি জামিনের অর্ডার চলে যায়, তাহলে আপনি ন্যায় বিচারের কথা বলে কী করবেন? আর দুর্নীতিবাজরা ভাববে টাকা যদি থাকে তাহলে  জামিন পেতে কোনো অসুবিধা হবে না। মাঝে মধ্যে মনে হয় এত প্র্যাকটিস করে কী হবে? দুই-চার কথা বলি তাও যদি কারো বিবেকে লাগে। বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে নিজেকে যেহেতু দাবি করি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাব।’

গত ১৯ জুন জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কারা-উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজনস) পার্থ গোপাল বণিক জামিন পান। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫ এর বিচারক ইকবাল হোসেন ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন মঞ্জুর করেন। এই মামলায় গত বছরের ৪ নভেম্বর গোপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

২০১৯ সালের ২৭ জুলাই ডিআইজি পার্থ গোপাল বণিক চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখন তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ৮০ লাখ টাকা অর্জন করেন। সেই টাকা পার্থ গোপাল বণিক তার নিজ বাসার ক্যাবিনেটে লুকিয়ে রাখেন। অনুসন্ধানকালে অভিযান পরিচালনা করে তার বাসা থেকে ওই টাকা জব্দ করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি পার্থ গোপাল বণিক গত বছরের ২৮ জুলাই দুদকে হাজির হয়ে অনুসন্ধান টিমের কাছে বক্তব্য দেন। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পার্থ গোপাল বণিক জানান, তার বাসায় ৩০ লাখ টাকা নগদ আছে। এই টাকার বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। পরে অভিযান চালিয়ে তার বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়। এই মামলায় হাইকোর্টে একাধিকার জামিন আবেদন করেও তিনি জামিন পাননি।

এমএইচডি/এইচকে