২০২০ সালের ১২ জুলাই গ্রেফতার হন সাবরিনা

দেশে করোনা মহামারি শুরুর পর গেল বছরের জুলাইয়ে আলোচনায় উঠে আসে জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর নাম। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে করা মামলায় স্বামীসহ গ্রেফতার হন তিনি। 

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতি করে ব্যাপক আলোচনায় থাকা সাবরিনা  প্রতারণা করেছেন নির্বাচন কমিশনের সাথেও। নির্বাচন কমিশনের সাথে প্রতারণা করে নিজের নামে একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছিলেন তিনি।

এসব ঘটনার এখন বছর ঘুরতে এলেও শেষ হয়নি মামলার কার্যক্রম। করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। আর একাধিক জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির ঘটনায় মামলাটির তদন্তই শেষ হয়নি। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেছেন খুব শিগগিরই আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। অন্যদিকে করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে খুব দ্রুত রায় ঘোষণা করা হবে সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার সাবরিনা বরখাস্ত হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতির মামলার অভিযোগে বলা হয়, স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন নিয়ে জেকেজি করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করে। পরে অভিযোগ ওঠে যে জেকেজি টাকা নিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দিচ্ছিল। 

গত বছরের ২২ জুন জেকেজির সাবেক গ্রাফিক্স ডিজাইনার হুমায়ুন কবীর হিরু ও তার স্ত্রী তানজীন পাটোয়ারীকে আটক করে পুলিশ। হিরু স্বীকারোক্তি দিয়ে জানান, তিনি ভুয়া করোনা সার্টিফিকেটের ডিজাইন করতেন, যার সঙ্গে জেকেজি গ্রুপের লোকজন জড়িত। ওই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জেকেজির সিইও ও সাবরিনার স্বামী আরিফুলসহ চারজনকে আটক করে। আরিফুল জানান, প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরীর জ্ঞাতসারেই সব কিছু হয়েছে। এরপরেই সাবরিনাকে গ্রেফতার করা হয়।

এরপর একই বছরের ৫ আগস্ট ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রট আদালতে সাবরিনা ও আরিফসহ আট জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী। চার্জশিটে সাবরিনা ও আরিফকে এই জালিয়াতির মূল হোতা বলে উল্লেখ করা হয়। বাকিরা প্রতারণা ও জালিয়াতি করতে তাদের সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

করোনাভাইরাস পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে সিলগালা করেও দেওয়া হয় জেকেজি হেলথকেয়ার।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন— আবু সাঈদ চৌধুরী, হিমু, তানজিলা, বিপুল, শফিকুল ইসলাম রোমিও ও জেবুন্নেসা। তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে হিমু, তানজিলা ও রোমিও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে সবাই কারাগারে রয়েছেন।

আলোচিত এ মামলায় গত বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরাফুজ্জামান আনছারী আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।

এ মামলার বিষয়ে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। তাছাড়া গত বছর থেকে এই বছরে করোনা পরিস্থিতির কারণে সব মামলার বিচার একটু দীর্ঘায়িত হচ্ছে। আদালতের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে শুরু হলে খুব দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে রায় ঘোষণা করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।’

এই চিকিৎসককে নিয়ে তদন্তে নেমে তার দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র পায় দুর্নীতি দমন কমিশন। দুদকের পক্ষ থেকে তা চিঠি দিয়ে ইসিকে জানানো হলে ডা. সাবরিনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি দুটি ‘ব্লক’ করা হয়।

এ ঘটনায় সাবরিনার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন যে মামলা করেছে সেটিতে বলা হয়েছে, সাবরিনা ২০০৯ সালে মোহাম্মদপুর এলাকায় ভোটার হন। সেই এনআইডিতে তার নাম সাবরিনা শারমিন হোসেন, বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হোসেন, স্বামী আর এইচ হক। তার দ্বিতীয় এনআইডির নিবন্ধন হয়েছে ২০১৬ সালে, সেখানে তার নাম সাবরিনা শারমিন হুসেন, বাবার নাম সৈয়দ মুশাররফ হুসেন, মায়ের নাম জেসমিন হুসেন, স্বামী আরিফুল চৌধুরী। 

সাবরিনা গ্রেফতার হওয়ার পর তার নামে দুটি এনআইডি থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে চিঠি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। এরপর গত ৩০ আগস্ট বাড্ডা থানায় ডা. সাবরিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন গুলশান থানা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মমিন মিয়া। শুরুতে মামলাটি গুলশান থানার পুলিশের উপপরিদর্শক মমিনুর ইসলাম তদন্ত করলেও বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন ডিবি পুলিশ।

জেকেজি হেলথকেয়ারের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী

এ মামলার বিষয়ে জানেতে চাইলে মামলার বাদী গুলশান থানা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ মমিন মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন,‘আমরা চাই মামলাটি দ্রুত তদন্ত হোক এবং তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসুক। আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি যেন মানুষ দৃষ্টান্ত হিসেবে নেয়। আমরা আশা করব প্রতিটি মানুষ যেন সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র করে। তথ্য লুকিয়ে কেউ যেন দ্বিতীয়বার জাতীয় পরিচয়পত্র না করে।’

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রিপন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন,‘মামলাটি তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করব। এই মূহূর্তে তদন্তধীন বিষয়ে এর বেশি কিছু বলা সম্ভব না।’

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার সাবরিনা বরখাস্ত হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন। সরকারি নথিপত্রে নাম সাবরিনা শারমিন হুসাইন থাকলেও এই চিকিৎসক সাবরিনা আরিফ নামে নানা কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। 

টিএইচ/এনএফ