বাবা-মা-বোনকে হত্যার অভিযোগে মুনের ৪ দিনের রিমান্ড
রাজধানীর কদমতলী এলাকায় বাবা-মা ও বোনকে হত্যার অভিযোগে মেহজামিন মুনের ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২০ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর তাপস কুমার পাল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, কদমতলী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক জাকির হোসাইন মেহজামিন মুনের সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। বিচারক ৪ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
শনিবার (১৯ জুন) বিকেলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) শাহ ইফতেখার আহমেদ ঢাকা পোস্টকে জানান, পরিবারের সবাইকে তিনি (মুন) বিষাক্ত কিছু খাইয়ে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কী কারণে এই মৃত্যু সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এর আগে শনিবার (১৯ জুন) সকালে কদমতলীর মুরাদপুর রজ্জব আলী সরদার রোডের ৫ তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে মুনের বাবা-মা ও বোনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন- মাসুদ রানা (৫০), তার স্ত্রী মৌসুমী ইসলাম (৪০) ও মেয়ে জান্নাতুল (২০)। অচেতন অবস্থায় মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও মেয়ে তৃপ্তিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, নিহত মৌসুমী ইসলাম উচ্চবিত্ত মানুষদের ‘মেয়ে সাপ্লাই’ দিতেন বলে অভিযোগ আছে। আর তার মেয়ে মুনও এক রাজনৈতিক নেতার ‘বেডপার্টনার’ বলে জানা গেছে। মা-মেয়ের মধ্যে দেহব্যবসা নিয়ে ঝামেলা হয়। এর রেশ ধরে মুন পরিকল্পিতভাবে সবাইকে হত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।
জানা গেছে, মুনের মা মৌসুমী সাবেক এক বিএনপি নেতার পিএস হত্যা মামলার আসামি। মুনের বাবা মাসুদ রানা দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন। তিনি স্ত্রী-মেয়ের দেহব্যবসার বিষয়ে জানতেন।
পুলিশ আরও জানায়, মরদেহগুলো হাত-পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিষাক্ত কিছু প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে। আলামতগুলো পরীক্ষার জন্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। মরদেহগুলো সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
এ ঘটনায় সংকটাপন্ন অবস্থায় আটক মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম ও তাদের শিশুসন্তান তৃপ্তিকে ঢামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শফিকুলকে মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের শিশুসন্তান আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। তাকে ঢামেকের ২১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
মুনের স্বামী শফিকুল ইসলাম জানান, তাদের বাসা রাজধানীর কদমতলীর বাগানবাড়ি এলাকায়। শুক্রবার (১৮ জুন) রাত ৯টার দিকে স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি যান। যাওয়ার সময় আম-কাঁঠাল কিনে নেন। রাতে মুন তাদের সবাইকে নুডুলসসহ অনেক কিছু খেতে দেন। বাসার সবাই খেয়েছে, কিন্তু পরে কী হয়েছে এ বিষয়ে তার কিছুই স্পষ্ট মনে নেই। স্ত্রী মুনের সঙ্গে গত তিন মাস ধরে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। মুনের সঙ্গে তার বাবা-মায়েরও সম্পর্ক ভালো ছিল না বলে জানায় শফিকুল।
পুলিশ জানায়, কদমতলী মুরাদনগর এলাকায় মুনের বাবা মাসুদ রানা স্ত্রী মৌসুমী ও মেয়ে জান্নাতুলকে নিয়ে বসবাস করতেন। অপর মেয়ে বিবাহিতা মুন বাগানবাড়িতে স্বামীর বাসায় বসবাস করতেন। তাদের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।
কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের বড় মেয়ে মেহজামিন মুন সবাইকে বিষাক্ত কিছু পান করিয়ে হত্যা করতে পারেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পারিবারিক কলহের জেরে তিনি এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন।
টিএইচ/এইচকে/জেএস