রাজধানীর মহাখালী থেকে রোববার (৩০ মে) ময়না মিয়ার হাত-পা ও মাথাবিহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা খাতুনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

মঙ্গলবার (১ জুন) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী শুনানি শেষে রিমান্ডের এ আদেশ দেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বনানী থানার মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক কাজী শরিফুল ইসলাম মামলার সুষ্ঠু তদন্তের প্রয়োজনে আসামি ফাতেমার ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ দেন। 

আরও পড়ুন : স্বামীকে ৬ টুকরো করার বীভৎস বর্ণনা দিলেন স্ত্রী

ময়না হত্যার ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে সোমবার (৩১ মে) ফাতেমাকে আটক করে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ফাতেমার দেখানো জায়গায় গিয়ে ময়না মিয়ার মাথা উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার করা হয় ফাতেমাকে।

এরপর পুলিশ তার কাছে হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে জানতে চায়। পুলিশের কাছে অকপটেই সব স্বীকার করেন ফাতেমা। স্বামীকে হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনায় ফাতেমা পুলিশকে বলেন, হত্যার পরিকল্পনা অনুযায়ী কড়াইল এলাকা থেকে ফাতেমা দুই পাতা ঘুমের ট্যাবলেট কিনে শুক্রবার (২৮ মে) রাতে জুসের সঙ্গে ময়না মিয়াকে খাইয়ে দেন। ময়না মিয়া সারারাত-সারাদিন ঘুমে অচেতন থাকলে সন্ধ্যার দিকে কিছুটা জ্ঞান ফিরে পায় এবং স্ত্রীকে গালমন্দ করে আক্রমণ করতে গিয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়েন।

একপর্যায়ে ময়না মিয়া পানি পানি বলে আর্তনাদ করলে ফাতেমা আবারও তার মুখে ঘুমের ট্যাবলেট মেশানো জুস ঢেলে দেন। এ পর্যায়ে ময়না মিয়া নিস্তেজ হয়ে খাটে পড়ে গেলে ফাতেমা তার ওড়না দিয়ে ময়না মিয়ার দুই হাত শরীরের সঙ্গে বেঁধে রাখে এবং মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেয়। এ সময় ময়না মিয়া আর্তনাদ করতে থাকলে ফাতেমা বুকের উপরে বসে তার ঘরে থাকা স্টিলের চাকু দিয়ে গলাকাটা শুরু করেন। 

ধস্তাধস্তি করে ময়না মিয়ে ওড়না ছিঁড়ে তার হাত মুক্ত করে ও ফাতেমার হাতে খামচি এবং মুখ খুলে কামড় দেয়। এতে ফাতেমার রাগ আরও বেড়ে যায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে ময়না ও ফাতেমা দুজনেই খাট থেকে পড়ে গেলে ফাতেমা ভিকটিমের বুকের উপরে উঠে গলার বাকি অংশ কেটে দেয়।

পরে সকালে ফাতেমা লাশ গুম করার জন্য ধারালো চাকু দিয়ে ময়নার হাতের চামড়া ও মাংস কাটে এবং ধারালো দাঁ দিয়ে হাড় কেটে খণ্ডিত অংশকে তিনটি ভাগে রাখে।

একটি লাল রঙের কাপড়ের ব্যাগে মাথা, শরীরের মূল অংশকে একটি নীল রঙের পানির ড্রামে, কেটে ফেলা দুই পা এবং দুই হাতকে একটি বড় কাপড়ের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। এলাকা থেকে ১৩০০ টাকায় একটি রিকশা ভাড়া করে প্রথমে আমতলী এলাকায় শরীরের মূল অংশ ফেলে দেয়। পরবর্তীতে মহাখালী এনা বাস কাউন্টারের সামনে দুই হাত-দুই পা ভর্তি ব্যাগ রেখে চলে আসে বাসায়।

বাসায় এসে সেখান থেকে খণ্ডিত মাথার ব্যাগটি নিয়ে বনানী ১১ নম্বর ব্রিজের পূর্বপ্রান্ত থেকে গুলশান লেকে ফেলে দেয়। এরপর বাসায় এসে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকে।

সোমবার (৩১ মে) ফাতেমাকে বনানী এলাকার একটি অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে বোরখা, ভিকটিমের রক্তমাখা জামাকাপড়, ধারালো ছুরি, ধারালো দা, বিষাক্ত পেয়ালা, শীল-পাটা উদ্ধার করে পুলিশ।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১ জুন) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতারের পর ফাতেমা খাতুন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। ফাতেমা জানান- ২৩ মে থেকে স্বামী ময়না মিয়া তার বাসাতেই অবস্থান করেন। পারিবারিক কলহ, টাকা পয়সা বণ্টন ও একাধিক বিয়েকে কেন্দ্র করে ময়না মিয়ার সঙ্গে তার মনোমালিন্য হয়। অন্যের বাড়িতে কাজ করে তার জমানো টাকা ময়না মিয়া নিয়ে অনৈতিক কাজে খরচ করতেন বলে অভিযোগ করেন ফাতেমা।

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ফাতেমা একাই এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছেন। আমরা খুব দ্রুত এ মামলার চার্জশিট দিতে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

টিএইচ/এইচকে