জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি
বিচার ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রশাসন ও বিচার বিভাগের সমন্বিত প্রচেষ্টা জনসাধারণের আস্থাকে দৃঢ় করার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে আইনের শাসনকে সমুন্নত রাখে। শুধু তাই নয়, বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোতে জেলা প্রশাসন সমাজে ন্যায়বিচারকে দৃশ্যমান করে তোলে। আর এসবের মধ্যদিয়ে একজন জেলা প্রশাসক রাষ্ট্রের মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে সূক্ষ্ম ভূমিকা পালন করে থাকেন। সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা আলাদা হলেও ব্যবহারিক প্রয়োজনে তাতে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় প্রয়োজন।
বিজ্ঞাপন
সোমবার বিকেলে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিচার বিভাগের প্রধান। গতকাল রোববার থেকে রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসক সম্মেলন। তিনদিনের এই সম্মেলন শেষ হবে ১৯ ফেব্রুয়ারি।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সম্মেলনে জেলা প্রশাসকদের দায়িত্ব, ভূমিকা তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘একটি জেলার বিচার বিভাগ ও জেলা প্রশাসন, দুটি স্বতন্ত্র স্তম্ভ হলেও অবিচ্ছেদ্যভাবে দাঁড়িয়ে আছে। দুটি স্তম্ভেরই উদ্দেশ্য অভিন্ন।’
আরও পড়ুন
তিনি বলেন, মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখা, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা বিচার বিভাগের দায়িত্ব। আর নির্বাহী বিভাগের দায়িত্ব হচ্ছে আইনের শাসন, নীতির বাস্তবায়ন, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শাসনকে সহজতর করা। কাজের ধরণ আলাদা হলেও বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। কোনোভাবেই তা বিরোধপূর্ণ হওয়া উচিত না।’
সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদের বিধান তুলে ধরে সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, সাংবিধানিকভাবে বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা আলাদা হলেও ব্যবহারিক প্রয়োজনে তাতে নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় প্রয়োজন। সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুসারে দেশের সর্বোচ্চ বিচারাঙ্গন সুপ্রিম কোর্টকে দুই বিভাগেরই সহায়তা দিতে হবে। সরকারি কোনো আদেশ-নির্দেশ, বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে অগ্রাহ্য বা বিলম্বিত করতে পারে না। আশা করছি, আইনের শাসন বজায় রাখার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসকরা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করবেন।
জেলার বিচার বিভাগ ও জেলা প্রশাসনকে একে অন্যের পরিপূরক উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘অনেক সময় অনেক বিষয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। কিন্তু কোনোভাবেই তা কর্তৃত্বের বিরোধে পরিণত হতে দেওয়া যাবে না। আলাপ-আলোচনা, সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্বের সমাধান করতে হবে।’
বিচার বিভাগের প্রধান বলেন, দেশের জনগণ একজন জেলা প্রশাসককে সরকারের প্রতিনিধি মনে করে থাকে। যখন একজন কৃষক, শ্রমিক বা একজন নারী জেলা প্রশাসনের কাছে আসে, তখন তারা আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নয়, সমাধান আশা করে।
সম্মেলনে সিলেট, যশোর ও নাটোরের জেলা প্রশাসক বক্তব্য রাখেন। সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দেওয়ানি মামলায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসক সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে থাকেন। এসব মামলা আরও দ্রুত নিষ্পত্তিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে একজন জেলা প্রশাসককে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হয়। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উচ্চ আদালতের অন্তর্বর্তী বা স্থায়ী আদেশ আছে কি না, জানা সম্ভব হয় না। পরে দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়টি কীভাবে সমাধান করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন এই জেলা প্রশাসক।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে জেলা প্রশাসকরা যাতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ-নির্দেশ, রায় সরাসরি পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করার জন্য প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক আসমা শাহীন। তিনি বিচার প্রার্থীদের হয়রানি লাঘবে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে জেলা পর্যায়ে বিচারক, প্রশাসন ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠনের প্রস্তাবও তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি।
এমএইচডি/এমজে