পি কে হালদার: ২৪ জনের বিদেশ যেতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন
সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়া পি কে হালদারের প্রতারণায় সহায়তাকারী ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা।
মঙ্গলবার (৫ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ আবেদন করা হয়েছে। দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজ্ঞাপন
যে ২৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে তারা হলেন- ১. হারুনুর রশিদ (ফাস ফাইনান্স), ২. উজ্জ্বল কুমার নন্দী, ৩. সামি হুদা ৪. অমিতাভ অধিকারী, ৫. মিস অবন্তিকা বড়াল, ৬. মিস শামীমা (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), ৭. মিস রুনাই (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং) ৮. আই খান (ইন্টারন্যাশনাল লিজিং), ৯. সুকুমার মৃধা (ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী), ১০. মিস অনিন্দিতা মৃধা, ১১. তপন দে, ১২. স্বপন কুমার মিস্ত্রি, ১৩. অভিজিৎ চৌধুরী, ১৪. রাজিব সোম, ১৫. ইরফান উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (সাবেক এমডি ব্যাংক এশিয়া), ১৬. অঙ্গন মোহন রায়, ১৭. নঙ্গ চৌ মং, ১৮. নিজামুল আহসান, ১৯. মানিক লাল সমাদ্দার, ২০. সোহেল সামস। এই ২০ জন প্রতি সপ্তাহে পি কে হালদারের সঙ্গে যোগাযোগকারী। এছাড়া পি কে হালদারকে বিভিন্নভাবে তথ্য দিয়ে সহযোগিতাকারী মাহবুব মুসা, একিও সিদ্দিকী, মোয়াজ্জেম হোসেন ও লিলাবতী হালদারেরও বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ৩ জানুয়ারি পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা রুল শুনানিতে পক্ষভূক্ত হন। ওইদিন পি কে হালদারের প্রতারণার শিকার সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামালের মেয়েসহ ভুক্তভোগী বিনিয়োগকারীরা আত্মসাৎকৃত টাকা ফিরিয়ে দিতে আদালতের কাছে আকুতি জানান।
তারা উচ্চ আদালতকে বলছেন, ‘আর্থিক ও মানসিক কষ্টে আমরা মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান।’
এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়, পিকে হালদার জালিয়াতির মাধ্যমে দেশের কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। যার ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে এবং গ্রাহকের আমানতের টাকা ফেরত দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। এসবের মাঝেই পি কে হালদার গোপনে দেশ ছাড়েন।
একপর্যায়ে তার বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে আনা ও তাকে গ্রেপ্তারে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চান উচ্চ আদালত।
এদিকে পিকে হালদারের বিষয়ে স্বপ্রণোদিত রুল জারি হয়েছে জেনে হাইকোর্টের কাছে নিজেদের সীমাহীন কষ্টের কথা বলতে দুদক আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন পিপলস লিজিংয়ের আমানতকারীরা।
তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (৩ জানুয়ারি) দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান হাইকোর্টকে বলেন, পিপলস লিজিংয়ের কয়েকজন আমানতকারী কিছু বলতে চান। পরে অনুমতি নিয়ে হাইকোর্টে নিজেদের দুর্দশার কথা বলেন চার আমানতকারী।
সামিয়া বিনতে মাহবুব নামের এক আমানতকারী অশ্রুসিক্ত নয়নে হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আজ আমি একজন ক্যান্সারের রোগী। আমার এখন আর চাকরি নেই। করোনা আসার পর থেকে আমার স্বামীরও চাকরি নেই। আমি আর আমার স্বামী মিলে আমাদের জীবনের কষ্টার্জিত টাকা পিপলস লিজিংয়ে আমানত রেখেছিলাম। এখন আমরা আমাদের টাকা পাচ্ছি না! এতটা অসহায় হয়ে গেছি যে, এবার বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারিনি। গত ১ বছর বাচ্চাদের একটু মাছ-মাংস খাওয়াতে পারিনি। আমরা আর্থিক-মানসিক কষ্টে মারা যাচ্ছি। আমরা এখন কার কাছে যাব? মাই লর্ড, আপনাদের কাছে আকুল আবেদন আমাদের বাঁচান।’
এক পর্যায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি মোস্তাফা কামালের মেয়ে ড. নাশিদ কামাল হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড, আমার বাবা এবং আমিসহ পরিবারের ৫ জন পিপলস লিজিংয়ে টাকা আমানত রেখেছি। আমরা সরল বিশ্বাসে আমাদের টাকাটা রেখেছিলাম। আমরা গণমাধ্যমে জেনেছি পি কে হালদার এখান থেকে টাকা নিয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং। তাই এখানকার আমানতকারী হিসেবে আমরা আমাদের টাকাটা ফেরত চাই।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মো. শওকতউর রহমান হাইকোর্টকে বলেন, ‘মাই লর্ড, দেশটা কি স্বাধীন করেছিলাম এভাবে নিজে প্রতারিত হওয়ার জন্য? আমি আমার আমানতের টাকাটা ফেরত চাই।’
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ বিনিয়োগকারীদের এসব কথা শুনে রুলের শুনানিতে তাদের পক্ষভুক্ত করে নেন। একইসঙ্গে এফিডেভিট আকারে বিনিয়োগকারীদের এই বক্তব্য আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। আদালত পরবর্তী শুনানির জন্য ৫ জানুয়ারি দিন করেন।
এদিকে ৩ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পালিয়ে থাকা প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ঠিকানা সরকারকে জানিয়েছে কানাডা। যেকোনো মুহূর্তে এই অর্থ পাচারকারীর বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করবে ইন্টারপোল। রোববার (৩ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ তথ্য জানান।
এমএইচডি/এইচকে