আসামির পক্ষে ওকালতি করায় বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় তাণ্ডব : ৮ আসামি ৭ দিনের রিমান্ডে
বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় তাণ্ডবের ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলায় ৮ আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। সোমবার (২ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আবু বক্কর সিদ্দিকের আদালত এ আদেশ দেন।
রিমান্ডে পাঠানো আসামিরা হলেন— পার্থ চক্রবর্তী, অপূর্ব শীল, উজ্জ্বল দাস, অপু চন্দ্র সাহা, নিলয় দাস, ধ্রুব দাস, দেলোয়ার হোসেন ও মো. নুরু।
বিজ্ঞাপন
গত ২৬ নভেম্বর আদালত এলাকায় অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যা করে চিন্ময় দাসের অনুসারীরা। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে আদালত। কোতোয়ালি থানা পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দেন। যাদেরকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তারা হলেন- রুমিত দাস, সুমিত দাস, গগন দাস, নয়ন দাস, বিশাল দাস, আমান দাস, মুন মেথর, রাজীব ভট্টাচার্য্য ও দুর্লভ দাস।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজুর রহমান বলেন, পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধাদানের অভিযোগে কোতোয়ালি থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় ৮ আসামিকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এছাড়া হত্যা মামলায় ৯ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
আরও পড়ুন
এদিকে, রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া দুই আসামি দেলোয়ার হোসেন ও মো. নুরুর পক্ষে ওকালতনামা দেওয়ার অভিযোগে দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আজ (সোমবার) দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম আদালতে বিক্ষোভ করেছেন আইনজীবীরা। দুই আইনজীবী হলেন- নেজাম উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট সানজিদা গফুর। তাদের মধ্যে নেজাম উদ্দিন অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর। একপর্যায়ে অ্যাডভোকেট নেজামকে চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিন্ময় দাসকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম আদালত এলাকায় সহিংসতা করে তার অনুসারীরা। এ সময় এক আইনজীবী নিহত হয়। এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ওকালতনামা না দেওয়ার জন্য আমরা মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। এর বাইরে গিয়ে দুই আইনজীবী দুই আসামির পক্ষে ওকালতনামা দিয়েছে। এটি নিয়ে আমরা ক্ষুব্ধ। আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। দুই আইনজীবীর মধ্যে একজন সরকারি কৌঁসুলি। তিনি আইনগতভাবে আসামির পক্ষে ওকালতি করতে পারেন না।
উল্লেখ্য, গত ২৫ নভেম্বর বিকেলে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। পরদিন ২৬ নভেম্বর তাকে চট্টগ্রামের একটি আদালতে হাজির করা হয়। আদালত জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শুরু করেন ইসকন ও চিন্ময়ের অনুসারীরা। টানা কয়েক ঘণ্টার বিক্ষোভ ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে বিকেলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে হত্যা করেন কিছু ইসকন অনুসারী। ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং স্থানীয় কয়েকজনের করা ভিডিও ফুটেজে হত্যার চিত্র দেখা যায়।
এ ঘটনায় গত ২৯ নভেম্বর নগরের কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আইনজীবী আলিফের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। একই দিন খানে আলম নামে একজন বাদী হয়ে ১১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তার আগেও একই ঘটনায় ৩টি মামলা হয়েছিল।
এমআর/এমএ