‘প্রেশার ক্রিয়েট করবেন না’ মনজিল মোরসেদকে হাইকোর্ট
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা বন্ধ রাখতে বার বার নির্দেশনা চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আইনজীবী মনজিল মোরসেদের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘কোর্টকে প্রেশার ক্রিয়েট করবেন না। আপনি আদালতকে প্রেশার ক্রিয়েট করতে পারেন না।’
বৃহস্পতিবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন।
বিজ্ঞাপন
শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে বলেন, ‘হাইকোর্টের দেওয়া রায় অনুসারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাছ কাটা প্রসঙ্গে রিটকারী ও পরিবেশবিদদের নিয়ে বৈঠক করবেন। তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। এক মাস সময় দেন। এক মাস পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।’
তখন মনজিল মোরসেদ বলেন,‘অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিশ্চিত করতে হবে এ সময়ে যেন কোনো গাছ কাটা না হয়। আদালতের আদেশ না থাকলে কালকেই গাছ কাটতে পারে। কোর্ট বলার কারণেই এখন পর্যন্ত গাছ কাটা বন্ধ রয়েছে। শুধু গাছ কাটা বন্ধ নয়, হাইকোর্টের অনেক নির্দেশনা আছে সেগুলো যদি পরে শোনেন তাহলে অ্যাটর্নি জেনারেলকে নিশ্চিত করতে বলেন, শুধু গাছ কাটা যেন বন্ধ রাখা হয়।’
তখন আদালত বলেন, ‘যদি গাছ কাটে তাহলে ওইদিনই আপনি মেনশন করবেন। আমরা যেকোনো দিন বসবো।’
মনজিল মোরসেদ আদালতে বলেন, ‘আমাদের অন্যদিকে ঠেলে দিচ্ছেন কেন মাই লর্ড। আমি তো এখানে পিটিশন নিয়ে এসেছি। আপনি ওইদিন অর্ডার দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল নিশ্চিত করবেন। আজকে অন্যদিকে ঠেলে দিচ্ছেন কেন? তাকে (অ্যাটর্নি জেনারেল) বলতে আপনাদের অসুবিধা কী? আপনার এখানে প্রসেডিং তো পেন্ডিং।’ তখন কোর্ট বলেন, ‘আমরা স্যান্ডওভার রাখছি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মাই লর্ড আমার সঙ্গে মন্ত্রীর কথা হয়েছে তিনি সবার সঙ্গে বসবেন।’
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘লার্নেড অ্যাটর্নি জেনারেল এটা তো কনটেম্পট ম্যাটার। আপনার তো কিছু বলারই রাইটস নেই। কোর্ট আপনাকে শুনছেন।’ আদালত বলেন, ‘যেকোনো বিষয়ে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে শুনতে পারি।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কনটেম্পট পিটিশনে কোনো স্থগিতাদেশ দেওয়া যায় না। আপনি প্রয়োজনে রিট পিটিশন নিয়ে ১৩ নম্বর কোর্টে যান।’
আবারও মনজিল মোরসেদ আদালতকে বলেন, ‘যেহেতু আজকে শুনানি হচ্ছে না। আপনারা শুধু অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলে দেন যেভাবে আছে, সেভাবেই যেন রাখে। কোনো অর্ডারের দরকার নেই।’
এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ তুমুল তর্কে জড়িয়ে পড়েন।
এক পর্যায়ে আদালত মনজিল মোরসেদকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি ঝগড়া করছেন কেন? আপনার প্রেয়ার আপনি কোর্টের কাছে বলছেন। কোর্ট তার সিদ্ধান্তের কথা বলেছে। আপনি তো কোর্টকে প্রেশার ক্রিয়েট করতে পারেন না। যেহেতু এ বিষয়ে একটি রিট পিটিশন আজকেই অন্য কোর্টে শুনানি হবে, এ কারণে এই কোর্ট ডিসাইড করেছে রি-ওপেনিংয়ে আপনার আবেদনের শুনানি হবে। এ অবস্থায় আপনি কেন প্রেশার ক্রিয়েট করছেন?’
এ সময় মনজিল মোরসেদ বলেন,‘আমি কোনো প্রেশার দিচ্ছি না। এরপর আদালত শুনানি দুই সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘মনজিল মোরসেদের মামলা তো পরিবেশ নিয়ে নয়। তিনি তো গাছ কাটা বন্ধ রাখতে আদেশ চাইতে পারেন না। জাজমেন্টে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি কমিটি করে স্বাধীনতার স্তম্ভ, ৭ মার্চের ভাষণের জায়গা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে। তিনি তো গাছ কাটা নিয়ে কথা বলতে পারেন না। গাছ কাটা বন্ধে তো পরিবেশ আইনজীবী সমিতির সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানরা রিট করেছেন। ওই মামলায় গাছ কাটা বন্ধ রাখা না রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ কারণে আমি বলেছি কনটেম্পট মামলায় গাছ কাটা বন্ধ রাখতে আন্ডার টেকিং দিতে পারবো না। এটা তো উনার (মনজিল মোরসেদের) মামলার বিষয় না। উনি রিট কোর্টে গেলে তখন আমি কথা বলবো।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘শুনানিতে তর্কাতর্কি হয়েছে। আমি শুনানিতে বলেছি, মুলতবি রাখেন আপত্তি নাই। কিন্তু আদেশটা দেন যেন গাছ কাটা না হয়। আমি বলেছি এটা আদালত অবমাননার মামলা। আদালত অবমাননার মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল কোনো দিন এপিয়ার করতে পারে না। তারপর অ্যাটর্নি জেনারেল এপিয়ার করে আদালতে এক মাস সময় চেয়েছেন। আদালতে ডিফেন্স নিয়ে বলেছেন, শুনানি মুলতবি রাখেন, সরকার সব দেখছে। আমি বলেছি আপনি অ্যাটর্নি জেনারেল এটা বলতে পারেন না। অ্যাটর্নি জেনারেলের তো কনটেম্পেটে আসার কোনো সুযোগ নেই।’
এদিকে পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটা বন্ধে রিটের শুনানি এক মাসের জন্য মুলতবি করেন হাইকোর্ট।
অ্যাটর্নি জেনারেলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। তবে এ সময়ে গাছ কাটা বন্ধ থাকবে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন আদালতকে নিশ্চিত করেছেন।
এমএইচডি/এসকেডি