ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে জুলাই গণহত্যার ঘটনার দুই মামলায় আসামি করার অভিযোগ করেছেন আমিনুল ইসলাম নামের রাজধানীর বাড্ডার এক পাথর ব্যবসায়ী। রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা ও কদমতলী থানার মামলায় তাকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই প্রধান আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে।

আমিনুল ইসলাম বলেন, আমার সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনার আসাদুল ইসলাম ও আমির হোসেন ষড়যন্ত্র করে আমাকে জুলাই গণহত্যা মামলার আসামি করেছেন। কারণ তারা আমার ১৪ কোটি টাকা অর্থ আত্মসাতের মামলার আসামি। অর্থ আত্মসাতের মামলা থেকে বাঁচতে আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।

রোববার (১৭ নভেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের মিডিয়া রুমের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী তিনি এসব কথা বলেন। এময় তার আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোনোরকম সম্পর্ক না থাকলেও মামলার এজাহারে আমাকে যুবলীগের নেতা উল্লেখ করা হয়েছে। এটা ডাহা মিথ্যা। আমাকে যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলো এ ঘটনার তদন্ত চাই। মাননীয় আইন উপদেষ্টা তদন্ত করে মামলা দায়ের করার রহস্য উন্মোচন করবেন, এই দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরে মারধর ও হামলা ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামিদের থেকে অর্থ নিয়ে সিআইডির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন রাজধানীর বাড্ডার এই পাথর ব্যবসায়ী।

আমিনুল ইসলাম সেদিন বলেন, সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরে হামলা ও মারধরের ঘটনায় গত ৪ মার্চ চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সিআর মামলা নং-৮৯/২৪ দায়ের করলে আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য বাংলাদেশ পুলিশ, সিআইডি বরাবর প্রেরণ করেন এবং ৩০ দিনের মধ্যে মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলে নির্দেশ প্রদান করেন। সিআইডি তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। আমি তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে মামলার যাবতীয় কাগজপত্র প্রদান করি। এসপি আনিসুল ও এসএসপি মো. সালাউদ্দিনসহ তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি মো. আসাদুল ইসলাম ও মো. আমির হোসাইনের কাছ থেকে অনৈতিক অর্থ প্রাপ্ত হয়ে মামলাটির কোনোরূপ তদন্ত ছাড়াই আমার প্রতিষ্ঠানের দুই জন কর্মকর্তার ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় কোনোরূপ জবানবন্দি না নিয়ে মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬১ ধারায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে গত ১৮ আগস্ট দীর্ঘ চার মাসের বেশি সময়ক্ষেপণ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এমন কিছু অসৎ পুলিশ কর্মকর্তার জন্য সব পুলিশ কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বলে মনে করি। এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করছি।

গত ২৮ মার্চ জাল-জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাৎ মামলায় আগাম জামিন নিতে আসা আসামিদের হামলার শিকার হন রাজধানীর বাড্ডার পাথর ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম। তিনি বিচার চেয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কাছে আবেদন করেন।

গত ৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম হামলার অভিযোগ করেন। সেদিন তিনি বলেন, আদালতের মতো পবিত্র জায়গায় এসে যদি হামলার শিকার হই তাহলে যাব কোথায়? সেদিন যদি আইনজীবী আমাকে রক্ষা না করত এতদিনে আমার কবর হয়ে যেত।

এ বিষয়ে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এটা খুবই দুঃখজনক। আদালত পবিত্র অঙ্গন। এখানে মানুষ বিচার চাইতে আসেন। আদালতে এসে যদি মানুষ হেনস্তার শিকার হয় তাহলে খুবই নিন্দনীয়। আমি সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আমিনুল ইসলাম বলেছিলেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আমি মামলার প্রয়োজনে হাইকোর্টে আসি। ওইদিন আগাম জামিনের জন্য অ্যাসরোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক মো. আমির হোসাইনও হাইকোর্টে আসেন। একপর্যায়ে আসামিরা আমার পিছু নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের সামনে আসেন। দুই আসামির নেতৃত্বে ১৫/১৬ জন সন্ত্রাসী আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অতর্কিত হামলা চালায়। এলোপাতাড়ি মারধর করে বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। একপর্যায়ে আমি প্রাণ রক্ষার্থে এক আইনজীবীর রুমে আশ্রয় নিই। পরে আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক বরাবর লিখিত আবেদন করেছি। আসামিরা এখন মামলা তুলে নেওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছে। আমাকে জানে মেরে ফেলার আশঙ্কা করছি।

এমএইচডি/এসএসএইচ