বিচারপতিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ উঠল সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে
দুর্নীতি ও গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে পাঁচ বছর আগে বিচারকাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে। এছাড়া গত ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ ওঠায় ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি। কিন্তু বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত ষোড়শ সংশোধনী মামলার রিভিউ নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ২০ অক্টোবর ওই রিভিউ নিষ্পত্তির পর পুনরুজ্জীবিত হয় বিচারপতি অপসারণ সংক্রান্ত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। নতুন করে গঠন করা হয় কাউন্সিল। এরপর বিচারপতিদের বিষয়ে বৈঠক করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। কাউন্সিলের অপর দুই সদস্য হলেন- আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ দুই বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও জুবায়ের রহমান চৌধুরী।
বিজ্ঞাপন
বৈঠকে যেসব অভিযোগে তিন বিচারপতিকে দীর্ঘদিন ছুটিতে রাখা হয়েছে সেসব অভিযোগ পর্যালোচনা হয়েছে। এছাড়া ১২ বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগও যাচাই-বাছাই চলছে বলে একাধিক সূত্র ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল এ পর্যন্ত দুটি মিটিং করেছে।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়েছে। কাউন্সিলের একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আরও পড়ুন
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো বিচারপতির বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এলে সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের সবচেয়ে সিনিয়র দুইজন বিচারপতিকে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠিত হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ওই বিচারপতিকে অপসারণ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সুপারিশ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
২০১৯ সালের ২২ আগস্ট হাইকোর্টের তিন বিচারপতিকে বিচার কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে ওই সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। বিচারকাজ থেকে সরিয়ে নেওয়া তিন বিচারক হলেন— বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হক। ওই সময়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে দেওয়া বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, হাইকোর্টের তিনজন বিচারপতির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পরামর্শক্রমে বিচার কাজ থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের কথা তাদের অবহিত করা হয়েছে। এরপর থেকেই তিন বিচারপতি পাঁচ বছর ধরে রয়েছেন বিচারকাজের বাইরে।
এদিকে গত ১৬ অক্টোবর দুর্নীতি ও ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করার অভিযোগ ওঠায় ১২ বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠান প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। তাদের হাইকোর্টের বেঞ্চে বিচারকাজ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
ওই ১২ বিচারপতি হলেন— বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ, বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার, বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামান, বিচারপতি আতাউর রহমান খান, বিচারপতি শাহেদ নূর উদ্দিন, বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামান, বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলাম, বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসেন দোলন, বিচারপতি খিজির হায়াত, বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
এমএইচডি/এমএ